ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে দৈনিক কালবেলায় ‘৫০ হাজারে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফেরি করে চক্রটি!’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং কলা, আইন ও সামাজিকবিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ডিএমপি কমিশনার আমাকে মেসেজে জানিয়েছেন যে, ‘প্রশ্নফাঁস সংবলিত প্রতারণার আসামিকে শিবচর বগুড়া এবং পাচঁবিবি, জয়পুরহাট হতে আজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে (বার্তা)।’
জিয়া রহমান বলেন, চক্রের মূলহোতা যে গ্রেপ্তার হয়েছে এটা অবশ্যই আমাদের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক সংবাদ। কালবেলাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই যে, তারা এ রকম একটা সংবাদ প্রকাশ করেছে, তার ভিত্তিতেই আমাদের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এভাবে সবাই মিলে বা সম্মিলিতভাবে যদি আমরা নেতিবাচক বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন গড়ে তুলি তাহলে সমাজ থেকে অনেক খারাপ জিনিসই দূর হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা পুলিশ বাহিনীকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা এই ধরনের প্রতারক বা গুজব ছড়িয়ে যারা বিভিন্নভাবে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে, তা কখনো রাজনৈতিক আবার কখনো অর্থনৈতিক, তাদের বিরুদ্ধে এত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং মুখোশ উন্মোচন করতে সক্ষম হচ্ছে। যাদের তৎপরতার মধ্য দিয়ে আমাদের গার্ডিয়ান এবং শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে দেওয়া হয় এবং শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করার পাঁয়তারা করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নফাঁস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই এমন দাবি করে অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে খুবই কনফিডেন্ট ছিলাম এবং আমরা বারবার বলেছি যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন কখনো ফাঁস হওয়ার কোনোরকম সম্ভাবনা নেই। আমরা অত্যন্ত যত্ন সহকারে এবং সতর্কতার সাথে এই কাজগুলো সম্পাদন করি। সুতরাং, এটা ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগই নাই। অতএব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক বা সাধারণ মানুষজন স্পষ্ট হলো।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রশ্নফাঁস করে বিক্রির জন্য টেলিগ্রামে গোপনে কাজ করছিল আহমেদ নিলয় (টেলিগ্রাম প্রোফাইলে দেওয়া) নেতৃতাধীন একটি চক্র। প্রশ্নফাঁস করার জন্য তার একটি গোপন টেলিগ্রাম গ্রুপ আছে। যদি কোনো ভর্তি ইচ্ছুক বিশ হাজার টাকা অগ্রিম ও তার ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদান করেন, তাহলে সেই গোপন গ্রুপে তাকে (পরীক্ষার্থীকে) যুক্ত করা হয় এবং হুবহু প্রশ্ন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তারপর বাকি ৩০ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে।
এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কালবেলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ভর্তিচ্ছু সেজে যোগাযোগ করেন চক্রের মূল হোতা আহমেদ নিলয়ের সঙ্গে। এ প্রেক্ষিতে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার ক্যান্ডিডেট সেজে তাকে টেলিগ্রামে বার্তা পাঠান এই প্রতিবেদক। বার্তায় কলা, আইন ও সামাজিকবিজ্ঞান ইউনিটের পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানালে তিনি মোট ৫০ হাজার টাকা চান।
তখন তিনি বলেন, আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যেই বিশ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করতে হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের এক কপি ছবি বিকেল ৪টার মধ্যেই দিতে হবে। এরপর একটি গোপন গ্রুপে যুক্ত করা হবে। সেখানেই আজকের এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সকালে দেওয়া হবে।
এ সময় শতভাগ প্রশ্ন কমন পড়বে কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার জন্য যত প্রশ্ন দেওয়া প্রয়োজন, ততই দেওয়া হবে। ১০০ শতাংশ দিলে তো ধরা পড়ে যায়। এ বিষয়ে তিনি জোর দাবি করে জানান যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রশ্ন আসবে, সেটির থার্ড কপি প্রোভাইড করা হবে।
কোন বিকাশ নম্বরে তাকে টাকা পাঠাতে হবে সেটা জিজ্ঞেস করলে তিনি একটি বিকাশ নম্বরও দেন। গোপন গ্রুপে যুক্ত হতে তিনি ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়ার জন্য বলেন। তার দেওয়া বিকাশ নম্বরটি হলো - ০১৬০৬০৬৮৫৯৭।
এছাড়া ঢাবিতে ভর্তি ইচ্ছুক সেজে বার্তা পাঠানো কালবেলার এই প্রতিবেদককে তিনি তার ব্যক্তিগত ফোন নম্বরে কল দিতে মানা করেন এবং অনলাইনেই অর্থাৎ টেলিগ্রামে মেসেজ-কল দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। উল্লেখ্য, তার টেলিগ্রাম প্রোফাইলে লেখা আছে যে, ‘প্রশ্নফাঁস করা শুধু আমার পেশা নয়, এটি আমার একটি নেশা’।
যে কথোপকথন হয়েছিল কালবেলা প্রতিবেদকের সঙ্গে?
প্রতিবেদক : আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ভাইয়া, আমি এবার ঢাবিতে এডমিশন টেস্ট দিব। কিন্তু কোনো প্রিপারেশন নিতে পারিনি। কোচিংও করিনি। আমার বাবা দুবাইতে থাকে, এখন উনি বলতেছে যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতেই হবে। ভাইয়া, দয়া করে হেল্প করা যায় আমাকে? বিশেষ করে ঢাবির বি ইউনিট। টাকা-পয়সা কোন সমস্যা না ভাই। ভাইয়া প্লিজ...
প্রশ্ন ফাঁসকারী : Conditions- মোট ৫০০০০ টাকা প্রশ্নের দাম। Advance ২০০০০ টাকা আর ৩০০০০ Exam দিয়ে আসার পরে। Dhaka University B Unit এর Admit Card এর ক্লিয়ার পিক দিতে হবে। ২০০০০ টাকা + Admit Card এর ছবি আজকে বিকেল 4 টার মধ্য জমা দিয়ে Secret গ্রুপে Join হতে হবে। Conditions এ রাজি থাকলে জানাবে Messenger ID তে Add করে নিব।
প্রতিবেদক : ভাইয়া, আমি দুপুর পরেই যোগাযোগ করব। কাইন্ডলি নম্বরটি দিয়ে রাখুন ভাইয়া।
প্রশ্ন ফাঁসকারী : একটা মোবাইল নম্বর।
মন্তব্য করুন