প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেছেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে একটি বিধিমালার খসড়া আইন মন্ত্রণালয় থেকে দুদিন আগে এসেছে আমাদের কাছে। আমরা এসআরও নম্বরের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এসআরও নম্বর হয়ে গেলেই গেজেট হয়ে যাবে। এরপর এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা এটি প্রকাশ করব। এটি জারি হলে বেসরকারি পর্যায়ের যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, সেগুলো একটি নিয়মনীতির আওতায় আসবে। নিবন্ধন বা একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে পারবে না।
তিনি বলেন, কিন্ডারগার্টেন মালিকদের দাবি ছিল, নিবন্ধন ফি যাতে বাড়তি না নেওয়া হয়। আমরা এক টাকাও বাড়াইনি। ২০১১ সালে যে ফি ছিল, ২০২৩ সালের বিধিমালায় সেই ফি রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সচিব এসব কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সচিব বলেন, কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি স্কুল, হাইস্কুল সংযুক্ত প্রাথমিক শাখাসহ সব ধরনের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নিবন্ধন বা একাডেমিক স্বীকৃতি নিতে হবে। তবে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এর আওতায় আসবে না। প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য একাডেমিক স্বীকৃতি ও এক বছরের জন্য নিবন্ধন দেওয়া হবে। ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করতে পারলে সরকার একাডেমিক স্বীকৃতির সময় বৃদ্ধি করবে, অন্যথায় স্বীকৃতি বাতিল করা হবে। বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে, তাদেরও স্বীকৃতি লাগবে। বিধিমালা প্রকাশের পর তাদের তিন মাস সময় দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ২০১১ সালের বিধি অনুযায়ী একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য সচিব পর্যন্ত যেতে হতো। আমরা এটির ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে দিয়েছি। নীতিমালার মধ্যে চেকলিস্ট করে দিয়েছি। সে অনুযায়ী, একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য এখন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে। এ জন্য তিনি ৩০ দিন সময় পাবেন। এরপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। আর নিবন্ধনের ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভাগীয় উপপরিচালক নিবন্ধন দিবে। এ জন্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরে আসতে হবে না। আবেদনকারীরা আবশ্যিকভাবে ৬০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত পাবে। সেই সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হলে তখন মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করতে পারবে।
সচিব আরও বলেন, আমরা কিছু ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করে দিয়েছি। ঢাকা শহরে স্কুল হলে কতটুকু জায়গা লাগবে, উপজেলা বা বিভাগে হলে কতটুকু লাগবে, ন্যূনতম শিক্ষক ও অবকাঠামো থাকতে হব, ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হলে তার একটা লিস্ট থাকতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় দিবসগুলো আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে।
ফরিদ আহাম্মদ বলেন, প্রাথমিক স্তরের জন্য এনসিটিবির বাধ্যতামূলক বইগুলো পাঠাতে হবে। এর বাইরে কোনো বই পড়াতে পারবে না, সেটি আমরা বলব না। তবে কোন বই পড়ানো হচ্ছে তা সরকারকে জানাতে হবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কত টাকা বেতন নেওয়া যাবে সরকার তা নির্ধারণ করে দেবে না। তবে কত টাকা বেতন নেওয়া হচ্ছে, তা একটি নির্দিষ্ট ফরমের মধ্যে লিখে সরকারকে জানাতে হবে। তখন সরকার এটি যৌক্তিক না অযৌক্তিক বিবেচনা করবে। আমরা নিষিদ্ধ করছি না, তবে সরকারের একটা তত্ত্বাবধান যাতে নিশ্চিত হয় সেটি চাচ্ছি।
৪৭ হাজারের কাছাকাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশের নিবন্ধন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও ৯০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বাইরে। কাজেই শুধু সরকারি স্কুল দিয়ে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন সম্ভব হবে না। সরকারি-বেসরকারি সবাইকে নিয়েই করতে হবে। সে কারণে আমরা সব জায়গায় হাত দিচ্ছি। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিবন্ধনের বাইরে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় যাতে না থাকে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।
মন্তব্য করুন