আত্মহত্যা না করে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজের উন্নয়ন নিজেকেই করতে হবে। পরিস্থিতি যাই হোক সেটার সাথে মানিয়ে নিতে হবে। তোমাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তোমার থাকতে হবে। একবার লস্ট মানে কিন্তু লস্ট ফরেবার। সার কথা হলো, প্রতিযোগিতা থাকতে হবে। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
আজ রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে অ্যাকশনিস্ট ফাউন্ডেশন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ‘মাদকাশক্তি ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ : নারী ক্ষমতায়নে মানসিক স্বাস্থ্যের ভূমিকা’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার মানুষরা চাইলেও মিথ্যা কথা বলতে পারে না। আর আমরা প্রতিনিয়ত অহরহ মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছি। আমরা অর্থনৈতিক বা সামাজিক ক্ষেত্রে যতটা এগিয়েছি আমাদের মূল্যবোধ বা দৃষ্টিভঙ্গি ততটা উন্নত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় পড়েও আমরা উন্নত মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করতে পারছি না। আমাদের উন্নয়নের সাথে আমাদের সোশ্যাল নর্মসগুলো উন্নত হচ্ছে না। উন্নত দেশের মানুষ হতে হলে তো উন্নত মন-মানসিকতার অধিকারী হতে হবে। তখনই উন্নত সমাজের ফল পাওয়া যাবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক বলেন, সমাজে চলতে গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে। এগুলো নিয়ে ভাবার দরকার নেই। জীবনে উত্থান পতন থাকবে। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এটার সক্ষমতা নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের একে অন্যের সহমর্মিতার হাত একে অপরের দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে। আমরা চাইলে এই পরিবর্তনগুলো আমাদের নিজেদের মধ্যে আমরা নিয়ে আসতে পারি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিভাবান শিক্ষার্থী যখন আত্মহত্যা করে সেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বলে, তাদের মনের কথা শুনার কেউ নেই। তাদের কথা কেউ শুনছে না। সুতরাং আমাদের তাদের কথা শুনতে হবে। খাওয়া দাওয়া আর লেখপড়ার খরচ বহন করাই মা-বাবার একমাত্র কাজ নয়। তাদের সাথে আবেগীয় বন্ধন তৈরি করতে হবে। সন্তানের সব কাজ করে দেওয়াও কিন্তু মুশকিল। তাদের রেসপন্সিবিলিটি নিতে শিখাতে হবে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ড্রাগ এডিকশন বা আত্মহত্যা এগুলো কারও একার পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব না। পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। যারা আত্মহত্যা করে তাদের মরে যাওয়া উদ্দেশ্য না। তারা মূলত পেইন থেকে বাঁচতে চায়। সুতরাং তাদের পেইন যদি দূর করে দেওয়া অথবা অন্তত কমানো যায় তাহলে তাদের বাঁচানো যাবে। সুতরাং আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন তাদের পেইন দূর করা যায়। এজন্য সকলকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, বাংলাদেশ মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নারী। সুতরাং আমরা যদি সেই নারীদের দিকে না তাকাই, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তাহলে একটি দক্ষ জনগোষ্ঠী বা সাফল্যমণ্ডিত জনগোষ্ঠী কখনোই তৈরি হবে না। কারণ একটি দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে সুস্থ না রাখলে সে দেশ কখনোই এগিয়ে যেতে পারবে না। এটি চরম একটি সত্য কথা।
তিনি বলেন, আমরা যারা নারী আছি তাদের বড় একটি দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমাদের প্রতি পদক্ষেপে প্রমাণ করতে হয় যে আমরা পারি। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রথমেই ধরে নেওয়া হয় তারা পারে। আর সেজন্যই আমাদের সবকিছুতে এক্সট্রা ইফোর্ট দিতে হয়। এটাও কিন্তু মানুষের মধ্যে এক ধরনের মানসিক প্রেশার তৈরি করে।
নারীদের প্রতি পরামর্শ দিয়ে সাবেক এই তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা মানসিক অসুস্থতা বা বিপর্যস্ততার কারণে নিজেদের ভালনারেবল মনে করেন তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে, অবশ্যই একজন সাইকোলজিস্ট দেখাবেন এবং পরিবারের কাছে সহযোগিতা চাইবেন। পরিশেষে এজ অ্যা টিম স্রোতের বিপরীতে সাঁতরিয়ে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।
অনুষ্ঠানে অ্যাকশনিস্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আ ন ম ফখরুল আমিন ফরহাদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমরান হোসেন ভূঁইয়া এবং সংগঠনটির হেড অফ কমিউনিকেশন রাইসা নাসের।
এ ছাড়া প্যানেল ডিসকাশনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. নাইমা নিগার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব উম্মে ইশরাত এবং কোকাকোলার মার্কেটিং প্রধান রাজবীন আবির।
মন্তব্য করুন