তানজিম মাহমুদ, জবি
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

পেছাতে পারে জকসু নির্বাচন, প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

জকসু নির্বাচন। ছবি : সংগৃহীত
জকসু নির্বাচন। ছবি : সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বানের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিলো আগামী ২২ ডিসেম্বর। তবে সম্প্রতি ভূমিকম্প আতঙ্কে অবকাঠামোগত ঝুঁকি, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসত্যাগ নির্বাচনী প্রস্তুতিকে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। লম্বা ছুটি থাকার ফলে পেছাতে পারে জকসু নির্বাচন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘোষিত সময় অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচন পেছানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজধানীসহ আশপাশ এলাকায় একাধিক ভূমিকম্পে জবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আবাসন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস-সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে ফাটল ধরার খবর উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেয়। এ প্রেক্ষাপটে গত ২৩ নভেম্বর প্রাথমিকভাবে একদিনের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে জবি প্রশাসন। পরে বিভিন্ন প্যানেল ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্তও জানায় প্রশাসন। পাশাপাশি একমাত্র ছাত্রী হলে ফাটল দেখা দেওয়ার আশঙ্কায় ২৪ নভেম্বর সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়।

এদিকে হঠাৎ ছুটি ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ত্যাগ আসন্ন শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক না হলে নির্বাচনী কার্যক্রম ব্যহত হবে। ফলে নির্ধারিত সময়ের নির্বাচন পেছানোর আশঙ্কাই এখন প্রবল হয়ে উঠেছে।

মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রার্থীদের-

নির্বাচন ঘিরে প্যানেলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কোনো প্যানেল চায় যথাসময়ে নির্বাচন হোক। কোনো প্যানেল চায় নির্বাচন পেছালেও যেন ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়।

জকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী চন্দন কুমার দাস বলেন, এই ছুটি নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলবে। কারণ অনেক প্যানেল অনলাইনসহ জেলা কল্যাণেও প্রচারণা শুরু করেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১৬ হাজার শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় ক্যাম্পাস। কিন্তু প্রশাসনের দেওয়া সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সেজন্য নির্বাচন পেছানো যুক্তিযুক্ত। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

আরেক স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী রাকিব হাসান বলেন, আমরা ২২ তারিখেই নির্বাচন চাই। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এর আগেও নির্বাচন পেছানো হয়েছে। এবার জকসু নির্বাচন পেছালে আর জকসু নির্বাচন হবে না। তাই নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন চাই।

ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী খাদিজাতুল কুবরা বলেন, আমাদের কাছে সবার আগে জবিয়ানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নির্বাচন আগানো বা পেছানো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে আমরা সাদরে গ্রহণ করবো।

ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধে নির্বাচনে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। কারণ তপশিল অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর থেকেই তারিখের আগে যে কাজ আছে তা প্রশাসনের কাজ, প্রার্থীদের না। প্রচারণা ৯ তারিখের পর।

ছাত্র শক্তি সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী শাহিন মিয়া বলেন, এই লম্বা ছুটি অবশ্যই নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। কারণ আমাদের হল নেই, ক্যাম্পাসই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এনগেজমেন্টের একমাত্র সুযোগ। তবে ভূমিকম্পের আতঙ্কে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় যদি নির্বাচন এক সপ্তাহ পেছানো হয়, তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে এর বেশি পেছালে সমস্যা। ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচন সম্পন্ন হোক এটাই প্রত্যাশা।

বামজোটসহ ৯টি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘মওলানা ভাসানী বিগ্রেড’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী ইভান তাহসীব বলেন, অবশ্যই ভূমিকম্পজনিত এই ১৪ দিনের ছুটি জকসু নির্বাচনের ওপর অনেকখানিই প্রভাব ফেলবে। শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময়ে এই দুর্যোগের ঘটনা সেই প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটাবে।

এদিকে প্রশাসন এমন লম্বা ছুটির পেছনে যথেষ্ট কারণ দর্শাতেও ব্যর্থ হয়েছে। আমরা দাবি করেছিলাম ক্যাম্পাসের সব ভবনের ফিজিবিলিটি টেস্ট ও প্রয়োজনীয় উদ্ধার কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিতে যে সময় লাগবে সেটা নিয়ে আবার একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে। তবে প্রশাসন তেমন কোনো বক্তব্য স্পষ্ট করেনি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, নির্বাচন পেছানোর এখনও অফিশিয়াল কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমাদের যে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা ছাড়া বিকল্প তারিখ নেই। তবে চলমান ছুটি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে। তবে অভিযোগ জানানো, আপিল করাসহ অন্য কাজ চলমান আছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা না থাকলে নির্বাচনী কার্যক্রম চালানো কঠিন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় খোলা না থাকলে তো নির্বাচনই হবে না। নির্বাচন পেছালেও খুব বেশি পেছানোর পক্ষে আমি না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসিনার প্রত্যর্পণে দিল্লির জবাবের অপেক্ষায় ঢাকা

হাত-পা হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে আসে, এটি কীসের লক্ষণ?

৫০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, পদ ১৭৫৫

গলা কাটার পর বিএনপি কর্মীকে মুখ পুড়িয়ে হত্যা

রস ছাড়াই গুড় তৈরি, পাঁচ কারখানাকে জরিমানা

হংকংয়ে আবাসিক ভবনে আগুন, নিহত ১৩

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৬১৫

কাটা ধানে আগুন / ‘ধারদেনা করে লাগিয়েছি, এক মুহূর্তেই সব শেষ’

ব্রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ফের পদত্যাগ

প্রতারণার অভিযোগ / আর্টসেলের বিরুদ্ধে মামলা করলেন রাকসুর জিএস

১০

বিএনপির এমপি প্রার্থী তুলির বিরুদ্ধে মামলা

১১

ট্রাম্পের মহানুভবতা, ক্ষমা পেল দুই টার্কি মুরগি

১২

ট্রেনে কাটা পড়ে দুজনের মৃত্যু

১৩

ঘরে বসেই ৬০ সেকেন্ডের পরীক্ষায় জেনে নিন আপনার ফুসফুসের অবস্থা কেমন 

১৪

খেলোয়াড়ের ওপর ভেঙে পড়ল বাস্কেটবলের পোল

১৫

বাউল শিল্পীদের ওপর ফের হামলা

১৬

২৩ মাস পর গ্যাস সংযোগ পেল যমুনা সার কারখানা

১৭

কাপড়ের মার্কেটে ভয়াবহ আগুন

১৮

সুখবর পেলেন মহিলা দলের নেত্রী পাপিয়া

১৯

কিডনির রোগ নিয়ে প্রচলিত ১৭ ভুল ধারণা, সত্যতা জেনে নিন এখনই

২০
X