শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, এসডিজি অনুসারে মাধ্যমিক পর্যন্ত সম্পূর্ণ অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তো আছেই, পরীক্ষার নামে কোচিং, প্রাইভেট, টিউশন, গাইড বইয়ের চাপের কারণে যে শিক্ষার্থীরা বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে, ঝরে পড়ছে, তার ওপর অতিরিক্ত বেতন-ভাতার চ্যালেঞ্জ আমাদের নিরসন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে শিক্ষামন্ত্রী একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রাথমিক একটি বৈঠক হয়েছে। দুই মন্ত্রণালয়ের ৩টি বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমরা দেখছি শিক্ষার্থী সংখ্যা যত ওপরে ওঠে তত কমতে থাকে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বেতনকে। শহরাঞ্চলে অনেক প্রতিষ্ঠান ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে অনেক বেশি বেতন নেয়। এটাকে কত কমিয়ে আনা যায় সেটিই চেষ্টা করা হচ্ছে। বিনা বেতনে একই ধাপে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কলেবর বৃদ্ধি করা যাবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী কর্মসূচি হলো প্রাথমিককে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত করা। আমরা তাদের সঙ্গে একমত হয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান মাত্রাতিরিক্ত বেতন নিচ্ছে, সেগুলো নামমাত্র বা কম আরও নেওয়ার জন্য জরিপ করে সেটি আমরা কমাব। যাতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিকের ধাপ উত্তীর্ণ হওয়া শতভাগ শিক্ষার্থী পাই। এটি আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য।
তিনি বলেন, এর প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কর্মসূচির মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এটি অন্তর্ভুক্ত করবেন। তাদের ৬৫ হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কমপক্ষে ২০ হাজার প্রতিষ্ঠানকে যদি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নেওয়া যায়, নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩০ হাজার প্রতিষ্ঠানের চাপও কমবে। সরকারের সরাসরি অর্থায়নে পরিচালিত হলে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী সেখানে অংশ নিতে পারবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত কমে আসবে। এর মাধ্যমে মানসম্পন্ন নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা আমরা দিতে পারব। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকার সরাসরি পরিচালনা করছে না, এমপিও দিয়ে সহযোগিতা করছে। স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে আমরা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ণ করব।
যদি এমপিও সরকারের থেকে পেয়ে থাকে, সেখানে শিক্ষার্থীদের থেকে অতি মাত্রায় ফি কেন নেওয়া হয়, তার যুক্তিগুলো কী আমরা সেটি অবশ্যই দেখব। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে সেটি যথেষ্ট নয় বলে সেটি কিভাবে কমানো যায়। যেখানে যুক্তিযুক্ত নয়, সেখানে কিভাবে অবৈতনিক করা যায় সেটি আমরা দেখব। কারণ একই প্রতিষ্ঠান তো দুই জায়গা থেকে আয় করতে পারে না।
সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে যারা প্রাথমিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছে তারা ১০ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ পায়। তাই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব হবে বলে আমাদের মনে হচ্ছে না। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা পিরিয়ডলিকালি রুটিন প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। সবার বিএড নেই। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান যাদের আছে, এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে এখন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা বিশেষ প্রশিক্ষণ কিন্তু দিচ্ছি না। সেটা যদি চলতে পারে, আমাদের তো যথেষ্ট পরিমাণ শিক্ষক আছে।
অবকাঠামোও তারা পরিকল্পনার মধ্যে নিচ্ছেন। কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো যাতে বাড়ানো যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানেই সেটি সম্ভব। একশর বেশি প্রতিষ্ঠানে এখনই সম্ভব- আমাদের এমনটিই বলা হচ্ছে। আমরা দেখেছি, শহরাঞ্চলে যেসব মডেল প্রাথমিক করা হয়েছে, সেগুলোতে শিক্ষার্থী পরিপূর্ণ। অর্থ্যাৎ চাহিদা আছে। সরকারের দেওয়া শিক্ষার মানের প্রতি আস্থা আছে। প্রাথমিকে শতভাগ এনরোলমেন্ট নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের ফলেই সম্ভব হয়েছে। নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে শতভাগ শিক্ষার্থী যদি আমরা পাই সেটি হবে আরেকটি অর্জন। মাধ্যমিকে শতভাগ করতে পারলে এসডিজির লক্ষ্য মাধ্যমিক পর্যন্ত শতভাগ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দেওয়া অনুযায়ী এগোচ্ছি।
পিইডিপি-৫ প্রকল্পে যাতে সেটি সংযুক্ত হয়। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখান স্বল্প খরচে শিক্ষার্থীরা পড়ছে। তবে আমরা এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষভাবে দেখতে চাই সেখানে এমপিও নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ফি নেওয়া হচ্ছে কি না। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে কিনা। নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবার নতুন করে ফি না দেওয়া লাগে সেটি যদি সুনির্দিষ্টভাবে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য অবৈতনিকভাবে পরিচালনা করার সুযোগ থাকবে।
মন্তব্য করুন