কালবেলা প্রতিবেদক
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:১০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অষ্টমের ২৯ আর নবমের ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল

প্রতীকী ছবি

শিখনদক্ষতা মূল্যায়নের জন্য অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত বিষয়ে ৯০ মিনিটের পরীক্ষা নিয়েছিল গণসাক্ষরতা অভিযান। প্রশ্ন ছিল নৈর্ব্যত্তিক। এতে দেখা গেছে, অষ্টম শ্রেণির ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাসই করতে পারেনি। অর্থাৎ তারা ৩৩ শতাংশ নম্বর পায়নি। আর নবম শ্রেণিতে ফেলের হার ২৬ দশমিক ২ শতাংশ। মূলত, করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিখনের ওপর সামগ্রিকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর ফলে পড়াশোনায় ব্যাপক শিখন ঘাটতি হয়েছে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজার হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘মহামারি উত্তর শিক্ষা: স্কুল শিক্ষার পুনরুদ্ধার ও আগামীর অভিযাত্রা: এডুকেশন ওয়াচ ২০২২’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী বাছাই করে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়। শিক্ষকরা এ পরীক্ষা মূল্যায়ন করেছেন। ভৌগোলিক এবং উন্নয়ন বৈচিত্র্য ও বিস্তার বিবেচনায় আটটি বিভাগের আটটি জেলা এবং ২১টি উপজেলা (সাত জেলার তিনটি করে উপজেলা), দুটি সিটি করপোরেশন এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সংবাদ সম্মেলেনে গবেষণা প্রতিবেদনের সার্বিক দিক তুলে ধরেন এডুকেশন ওয়াচের ফোকাল পয়েন্ট ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ গবেষণার সার্বিক কাজ করা হয়। একই বছরের অক্টোবরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিখন মূল্যায়ন অংশে অষ্টম ও নবম শ্রেণির এমন ফলাফলের তথ্য তুলে ধরা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৩৩ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে পাস করাদের দুই-তৃতীয়াংশের ফল আবার সন্তোষজনক নয়। কারণ, অন্য দেশগুলোতে এসব পরীক্ষায় বহুনির্বচনী প্রশ্নে পরীক্ষা হলে পাস করতে ৬০ শতাংশ নম্বর থাকতে হয়। এতে দেখা গেছে, শুধু ফেল নয়, পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল বলে বিবেচিত ডি গ্রেড (৩৩ থেকে ৩৯ শতাংশ নম্বর) পেয়েছে অষ্টম শ্রেণির ৩৬.১ শতাংশ শিক্ষার্থী। নবম শ্রেণিতে ডি গ্রেড পেয়েছে ৩৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

প্রতিবেদনে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বিষয় ভিত্তিক অবস্থাও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, অষ্টম শ্রেণির ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলায়, ৬৫.৩ শতাংশ ইংরেজিতে এবং ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে ৩৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করেছে। সব মিলিয়ে পাস করেছে ৭১.১ শতাংশ। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফলাফল অষ্টম শ্রেণির তুলনায় সামান্য ভালো। নবম শ্রেণির বাংলায় ৮৩.৭ শতাংশ, ইংরেজিতে ৭১.৭ শতাংশ এবং গণিতে ৬৫.৯ শতাংশ পাস করেছে। সব মিলিয়ে পাসের হার ৭৩.৮ শতাংশ।

মূল্যায়নে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা তুলনামূলকভাবে ভালো করছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণির ৭৪ শতাংশ মেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে, আর ছেলেদের ক্ষেত্রে এ হার ৬৮ শতাংশ। নবম শ্রেণির ৭৫ শতাংশ মেয়ে এবং ৭৩ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।

উভয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক ফলাফলে দেখা গেছে, যশোর জেলায় সর্বোচ্চ ৯০.৫ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ফলাফলে সবচেয়ে পিছিয়ে হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলার মোট পাসের হার ৪২.৯ শতাংশ। গবেষণায় আরও বলা হয়, শিখনঘাটতি সম্পর্কে অংশীজনদের মধ্যে কোনো দ্বিমত ছিল না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭১ শতাংশ এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, স্কুল খোলার পর তারা পাঠ বোঝার জন্য বিশেষ কোনো সহায়তা পায় নি। করোনার পর বিদ্যালয়গুলোতে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের ৫৭.৮ শতাংশ এবং মাধ্যমিক শিক্ষকদের ৪৪.৪ শতাংশ। যদিও এই অতিরিক্ত পাঠের গুণগতমান এবং কার্যকারিতা নিরূপণ করা যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

করোনা পরবর্তী সময়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং নির্ভরতা বেশি ছিল বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। বলা হয়েছে, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৮৫.১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং নির্ভরতা বেশি ছিল। এই হার সবচেয়ে বেশি শহরে। আর অভিভাবকদের তথ্য অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণির প্রায় ৬৪ শতাংশ এবং নবম শ্রেণির ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরিংয়ের জন্য প্রতি মাসে ১ হাজার একশ` টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রাথমিকে ৭৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের পাঠ ও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বাণিজ্যিক গাইড বই অনুসরণ করছে। ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে প্রাথমিক পর্যায়ে গড়ে ৬৬৯ টাকা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে দুই হাজার ৬৫ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে বলে অভিভাবকেরা জানিয়েছেন।

গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করার পর এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, আমরা শিক্ষার ক্ষেত্রে শিখন নয়, পাস করাকে বেশি গুরুত্ব দেই; এটি সবচেয়ে বড় সমস্যা। কাজেই যারা শিক্ষার ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন, তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে নীতির সংকট নেই। কিন্তু বাস্তবায়নে যারা রয়েছেন, তারা ঠিকমতো কাজ করছেন না। নীতি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু সক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষাকে সর্বজনীন করতে হবে, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এজন্য মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন এবং এডুকেশন ওয়াচের সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউজিসির খণ্ডকালীন সদস্য হলেন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম

মিরপুর টেস্টের টিকেট মূল্য প্রকাশ, যেভাবে পাওয়া যাবে 

তীব্র গতিতে উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’

ক্যাম্পাসে নোবিপ্রবি ফিল্ম সোসাইটির সিনেমা প্রদর্শন

ইউটিউবে ভিডিও বানাতে গিয়ে বিমান বিধ্বস্ত, ৬ মাসের জেল

বুটেক্সে সেমিস্টার শেষ ৯ মাসে, হয়নি ফলাফল

সংসার করার মতো লোকের অনেক অভাব : হুমায়রা সুবহা

কমবে ঢাকার তাপমাত্রা, হতে পারে বৃষ্টি

শরিকদের আশার বাণী শোনালেন তথ্যমন্ত্রী

যশোরে এসিল্যান্ড পরিচয়ে মোবাইলে প্রতারণা

১০

মেসির মায়ামিতেই অনুষ্ঠিত হবে কোপার ফাইনাল

১১

জবির নতুন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর

১২

ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের টানেল ধ্বংসে ইসরায়েলের ভয়ংকর কৌশল!

১৩

বিদেশিদের চাপ একেবারেই নেই : ইসি আলমগীর

১৪

না ফেরার দেশে ‘সিআইডি’র ফ্রেডি

১৫

সরকার আশ্বাস দিয়েছে বলেই নির্বাচনে এসেছি : জাপা মহাসচিব

১৬

এবার দক্ষিণ গাজা খালি করতে চায় ইসরায়েল

১৭

আসন ভাগাভাগির সিদ্ধান্ত কবে, জানালেন কাদের

১৮

নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি

১৯

শুরু হলো এপিকটা অ্যাওয়ার্ড-২০২৩

২০
X