বাংলাদেশের ইতিহাসে শাপলা চত্বরের সেই কালরাত আমাদের জাতীয় বিবেককে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। সেদিন যেসব নিরীহ মানুষ গুলির বৃষ্টিতে ঝরে গিয়েছিলেন তাদের বেশির ভাগ ছিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। যেসব তরুণ স্বপ্নভরা চোখে ভবিষ্যৎ দেখতে চেয়েছিলেন, যেসব শ্রমজীবী বাবা-মা আর অসহায় মা-বোনেরা রক্তে ভিজে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল- তাদের রক্তের হিসাব আজও জাতি পায়নি।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন দাবি করে মঞ্চ ২৪ নামে একটি সামাজিক সংগঠন।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অসংখ্য শিশু সেই রাতে তাদের বাবাকে হারিয়েছে, অনেক মা হারিয়েছেন বুকের ধনকে, অসংখ্য স্ত্রী আজও স্বামীহারা। সেই শিশুদের আজও কেউ জিজ্ঞেস করে না, ‘তোমার বাবা কোথায়?’ সেই মায়েদের কণ্ঠে আজও কান্নার হাহাকার, ‘আমার সন্তান কি সত্যিই শহীদ হলো, নাকি তার নামই নেই শহীদের তালিকায়?’ জাতি হিসেবে আমরা এই দায় এড়িয়ে যেতে পারি না।
আজ আমরা আবারও দৃঢ়ভাবে দাবি জানাচ্ছি—
১. শাপলা চত্বর গণহত্যার জন্য অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার কমিশন গঠন করতে হবে, যেখানে দেশের শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন, নামকরা গবেষক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তি থাকবেন।
২. শহীদদের পূর্ণাঙ্গ ও সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে হবে, যাতে নিহত প্রতিটি শহীদের নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয় এবং তাদের পরিবার মর্যাদা ও স্বীকৃতি পায়।
৩. নিহত পরিবারগুলোর জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, ক্ষতিপূরণ, এবং সন্তানের জন্য শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রকে তার দায়িত্ব পালন করার। আর কোনো পরিবারকে প্রশ্ন নিয়ে বাঁচতে দেওয়া যাবে না- ‘আমার স্বজন কোথায়, তার রক্তের বিচার কবে হবে?’
শাপলা চত্বরের শহীদদের আত্মা আজও প্রশ্ন করছে- আমরা কি তাদের ভুলে গেছি? ইতিহাস কিন্তু কাউকে ক্ষমা করে না। জাতি যদি আজ নীরব থাকে, তাহলে সেই রক্তের ঋণ আমাদের উপর চিরকাল বর্তাবে।
আমরা বিশ্বাস করি, শাপলা চত্বরের শহীদদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একমাত্র পথ হলো সত্যকে প্রকাশ করা, বিচার নিশ্চিত করা এবং তাদের আত্মত্যাগকে জাতীয় ইতিহাসে চিরস্থায়ীভাবে স্থান দেওয়া।
আমরা তাই আবারও বলছি- শাপলা চত্বর গণহত্যার জন্য স্বাধীন কমিশন চাই, শহীদদের নাম প্রকাশ চাই, নিহত পরিবারদের ন্যায্য অধিকার চাই।
মন্তব্য করুন