

ক্যালেন্ডারের পাতায় আজ ৮ ডিসেম্বর। শীতের আমেজমাখা এই দিনটি বাংলাদেশের বিনোদনপ্রেমীদের কাছে একটু আলাদা, একটু বিশেষ। কারণ, আজকের এই দিনে টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি নিজের মেধা, ধৈর্য আর অভিনয়ের জাদুতে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তিনি আর কেউ নন, ভক্তদের আদরের ‘নিশো ভাই’ এবং ইন্ডাস্ট্রির ভার্সেটাইল অভিনেতা আফরান নিশো।
আফরান নিশো—নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বহু রূপ। কখনো তিনি রাগী প্রেমিক, কখনো তোতলা যুবক, কখনো সাইকো কিলার, আবার কখনোবা খনি শ্রমিক। গত এক দশকে তিনি প্রমাণ করেছেন, নিশো কেবল একজন তারকা নন, তিনি একজন পুরোদস্তুর অভিনেতা।
শুরুর গল্পটা মসৃণ ছিল না আফরান নিশোর আসল নাম আহম্মেদ ফজলে রাব্বি। ২০০৩ সালে মডেলিংয়ের মাধ্যমে গ্ল্যামার জগতে তার পথচলা শুরু। অমিতাভ রেজার বিজ্ঞাপনে কাজ করে শুরুতে নজর কাড়লেও, নাটকে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ ও কঠিন পথ। একসময় যখন ইন্ডাস্ট্রিতে রোমান্টিক হিরোদের জয়জয়কার, তখন নিশো স্রোতে গা ভাসাননি। তিনি অপেক্ষা করেছেন, নিজেকে ভেঙেছেন এবং গড়েছেন।
ছোট পর্দার ‘মুকুটহীন রাজা’ একটা সময় ছিল যখন টিভি নাটকের দর্শক ভাগ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নিশো তার ‘মেথড অ্যাক্টিং’ দিয়ে সব শ্রেণির দর্শককে এক সুতোয় গেঁথেছেন। ভিকি জাহেদের ‘পুনর্জন্ম’ সিরিজের রাফসান হক চরিত্রটি তাকে নিয়ে গেছে কাল্ট ক্লাসিক পর্যায়ে। ‘বুকের বাঁ পাশ’, ‘লতা অডিও’, কিংবা ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার’-এর মতো নাটকগুলো তার ক্যারিয়ারের একেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি প্রমাণ করেছেন, নায়ক হতে হলে কেবল সিক্স প্যাক বা ফর্সা চেহারার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন চরিত্রের গভীরে ঢোকার সাহস।
ওটিটি এবং বড় পর্দার ‘মাসুদ’, নাটকের গণ্ডি পেরিয়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও নিশো দেখিয়েছেন তার কারিশমা। ‘মরীচিকা’র ভিলেন কিংবা ‘কাইজার’-এর ডিটেকটিভ—সবখানেই তিনি সেরা। তবে ভক্তদের দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ছিল—বড় পর্দায় কবে আসবেন নিশো?
সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে ২০২৩ সালে। রায়হান রাফী পরিচালিত ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় রাজকীয় অভিষেক হয় তার। সিনেমায় ‘মাসুদ’ চরিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয় এবং সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্য বুঝিয়ে দেয়—তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া। প্রথম সিনেমাতেই তিনি জানান দিয়েছেন, বড় পর্দাটা তাকে ধারণ করার জন্যই প্রস্তুত ছিল।
এই যুগে তারকারা যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রতিটি মুহূর্ত শেয়ার করতে ব্যস্ত, নিশো তখন উল্টো পথের পথিক। তিনি বিশ্বাস করেন, একজন অভিনেতার কাজ কথা বলবে, তার ব্যক্তিগত জীবন নয়। স্ত্রী তৃষা ও একমাত্র সন্তান নির্বানকে নিয়েই তার প্রশান্তির জগৎ। শুটিং ছাড়া বাকি সময়টা তিনি নিজেকে সময় দেন, নতুন চরিত্রের জন্য প্রস্তুত করেন।
শুভ জন্মদিন, জাদুকর চল্লিশের কোঠায় দাঁড়িয়েও তার ফিটনেস আর অভিনয়ের ক্ষুধা তরুণ অভিনেতাদের জন্য এক বড় পাঠ্যপুস্তক। ভক্তরা তাকে ভালোবেসে ডাকে ‘বস’। আজ তার জন্মদিনে কালবেলার পক্ষ থেকে রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। আফরান নিশো মানেই নতুন কিছু, আফরান নিশো মানেই চমক। ভক্তরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন—বড় পর্দায় আবার কবে নতুন রূপে হাজির হবেন তাদের প্রিয় তারকা।
শুভ জন্মদিন, ভার্সেটাইল সুপারস্টার আফরান নিশো!
মন্তব্য করুন