প্রায় দুই যুগের নির্বাসন ভেঙে বিশ্ব মঞ্চে ফেরার গল্প যেন রূপকথাকেও হার মানায়। ইরানের প্রতিবাদী চিত্রপরিচালক জাফর পানাহি কান-এর লালগালিচায় পা রাখতেই যেন কেঁপে উঠল চলচ্চিত্র জগৎ। ২২ বছর পর প্রথমবারের মতো কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েই বাজিমাত করলেন এই বর্ষীয়ান নির্মাতা। যার ওপর ২০১০ সালে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল নীরবতার অভিশাপ, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও বিদেশ ভ্রমণে ২০ বছরের নিষেধাজ্ঞা। এখন নিষেধাজ্ঞার ছায়া সরিয়ে নতুন কণ্ঠে বিশ্বদরবারে ফিরে এসেছেন তিনি এক অনন্য সাহস আর সৃষ্টিশীলতার বার্তা নিয়ে।
৭৮তম কানের সমাপনী আয়োজনে উৎসব সেরা পুরস্কারটি উঠলো তার হাতে। শনিবার (২৪ মে) স্থানীয় সময় রাতে জাফর পানাহি তার নতুন ছবি ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান এক্সিডেন্ট’-এর জন্য পাম দর জিতে নেন। তেহরান সরকার ১৫ বছর ধরে তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। সর্বশেষ তিনি কানে উপস্থিত ছিলেন ২০০৩ সালে। যখন তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘ক্রিমসন গোল্ড’ ‘আঁ সার্তে রিগা’ বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছিল। ৬৪ বছর বয়সী পানাহির সঙ্গে এবার প্রিমিয়ার থেকে পুরো সময় কানে ছিলেন তার স্ত্রী, কন্যা ও ছবির প্রধান অভিনেতা বাহিদ মোবাস্সেরিসহ অন্য কলাকুশলীরা।
এর আগে গত মঙ্গলবার প্রিমিয়ারে দর্শকদের আবেগময় অভ্যর্থনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন পানাহি। চলচ্চিত্রটি উৎসর্গ করেন ইরানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সব নির্মাতা, বিশেষ করে সে সব নারী পরিচালক ও অভিনেত্রীদের, যারা নারীর অধিকারের দাবিতে আন্দোলনকারী কর্মীদের পাশে ছিলেন।
ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ ছবিতে দেখা যায়- বাহিদ নামের এক ব্যক্তিকে, যিনি একদিন অপহরণ করেন একটি কৃত্রিম পা-ওয়ালা লোককে, যিনি দেখতে হুবহু তার পুরনো নির্যাতনকারীর মতো। অতীতের সেই নির্যাতনের প্রমাণ পেতে তিনি অন্য বন্দিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সিদ্ধান্ত নিতে চান কী করবেন এই ব্যক্তির সঙ্গে। এই ছবিটি যেন শুধুই একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং প্রতিরোধ, স্মৃতি ও ন্যায়বিচারের এক গভীর মানবিক দলিল।
জাফর পানাহি এর আগে ১৯৯৫ সালে ‘দ্য হোয়াইট বেলুন’ চলচ্চিত্রের জন্য কানের ক্যামেরা দ’ওর এবং ২০১৫ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ট্যাক্সি’ ছবির জন্য গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও তাকে এখনো গোপনে এবং আইনের বাইরে থেকেই সিনেমা নির্মাণ করতে হয়।
যাদের হাতে উঠল কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫-এর পুরস্কার : পাম দ’অর (সেরা চলচ্চিত্র): ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’, জাফর পানাহি গ্রাঁ প্রি: ‘সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’, জোয়াকিম ট্রিয়ার জুরি পুরস্কার (যুগ্মভাবে): ‘সিরাত’, অলিভার লাক্স এবং ‘সাউন্ড অব ফলিং’, মাসা সালিনস্কি সেরা পরিচালক: ক্লেবার মেনডো ফিলো, ‘দ্য সিক্রেট এজেন্ট’ সেরা অভিনেতা: ওয়াগনার মৌরা, ‘দ্য সিক্রেট এজেন্ট’ সেরা অভিনেত্রী: নাদিয়া মেল্লিতি, ‘দ্য লিটল সিস্টার’ সেরা চিত্রনাট্য: জঁ-পিয়ের ও লুক দার্দেন, ‘ইয়াং মাদারস’ বিশেষ পুরস্কার: ‘রেজারেকশন’, বিগান ক্যামেরা দ’অর (সেরা চলচ্চিত্র): ‘দ্য প্রেসিডেন্ট’স কেক’, হাসান হাদি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পাম দ’অর: ‘আই’ম গ্ল্যাড ইউ’আর ডেড নাউ’, তাওফিক বারহোম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘স্পেশাল মেনশন’: ‘আলী’, আদনান আল রাজীব।
মন্তব্য করুন