চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গত ১ আগস্ট গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন তার স্ত্রী আনিসা।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি।
অপুর স্ত্রী বলেন, ঘটনার দিন অপু ঘটনাস্থলে তো দূরের কথা ঢাকাতেই ছিল না। সে ছিল কিশোরগঞ্জে। ওইদিন মিঠামইনে চলে যায়। অপু আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিল তাকে এসবের মধ্যে ফাঁসানো হবে।
ওই ঘটনার একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ভাইরাল হয়। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওটা আসলে অপু ছিল না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতা ইশরাকের সঙ্গে অপুর কী সম্পর্ক, সেটা আমি জানি না। কিন্তু অপুকে ব্যবহার করে একটা দল নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছে, কাউকে দাবানোর জন্য।
কোন দল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অপুর স্ত্রী বলেন, এইটা তো সবার কাছে ক্লিয়ার। কোন দল এটা আমি বলতে পারব না।
আনিসা বলেন, জুলাইয়ের ৩১ তারিখ রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত অপুকে বন্দি করে যে স্বীকারোক্তি নিল, এটা কারা নিল? আর গোপীবাগ কার বাসা? গোপীবাগ ইশরাক ভাইয়ের বাসা না?
অপুর স্ত্রী বলেন, অপুকে তো ইশরাক ভাইয়ের বাসার সামনে থেকেই ধরেছে। আর আপনারা দেখেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও-ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে, এগুলো সব ইশরাক ভাইয়ের বাসাতেই।
সংবাদ সম্মেলনে অপুর স্ত্রী অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন এবং ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপুকে টার্গেট করে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে সাবেক নারী সংসদ সদস্যের (এমপি) বাসায় হানা দিয়ে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার জানে আলম অপুর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, চাঁদাবাজির ঘটনার পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন অপু নিজেই।
তিনি ৩৫ মিনিটের ওই ভিডিওতে চাঁদা আদায়ের ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছেন। গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদের বাসায় যাওয়ার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয় বলে ওই ভিডিওতে দাবি করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া অপু।
ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় টাকার ব্যাগ নিতে যে ছেলেকে দেখেছেন, সেটা আমি। আপনারা একটি ফুটেজের মাধ্যমে দেখেছেন যে, সমন্বয়করা চাঁদাবাজিতে জড়িত। যে সমন্বয়ক গত বছর ছিল মহানায়ক, তারা হয়ে গেল চাঁদাবাজ।’
খেদোক্তি ও হতাশা প্রকাশ করে অপু আরও দাবি করেন, ঘটনার দিন ভোর ৫টায় পুলিশের ওই জোনের এক কর্মকর্তাকে অবগত করে একদম অফিসিয়াল প্রসেসে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শাম্মীর বাসায় তারা ‘অভিযান’ চালান। আর সেই ‘অভিযানে’ যাওয়ার আগে গুলশানের কোনো একটি জায়গায় উল্লিখিত উপদেষ্টার সঙ্গে তার কথা হয়।
অপু প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘মিডিয়ায় সে বিষয়টি নেই কেন? আগের রাতে অভিযানের বিষয়টি মিডিয়ায় ধামাচাপা দেওয়া হলো কেন? ভোরবেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেই অভিযানের তথ্য নেই কেন। অভিযানের সময় আমরা বুঝতে পারি, শাম্মী সেখানে ছিলেন। তথ্য পেয়ে তিনি পালিয়েছেন। যে আড়াই মিনিটের ভিডিও ভাইরাল করে আমাদের রাতারাতি ভিলেন বানানো হলো, তাদের কাছে চ্যালেঞ্জ, সৎ সাহস থাকলে আগের রাতের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করুন। দেখি কে ফোন করছেন, কার ফোনে শাম্মী ওই বাসা থেকে বের হয়েছেন। আমরা যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অভিযানে গেলাম, সেখানে আমাদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল—সেগুলো প্রকাশ করুন।’
এদিকে চাঁদাবাজির মামলায় অপুকে ৪ দিনের রিমান্ডে দেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন অপু।
মন্তব্য করুন