উত্তরা সেক্টর-৪ কল্যাণ সমিতি কর্তৃক নাটক ও সিনেমার শুটিং বন্ধের নোটিশকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতি অঙ্গনে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সমিতির এই সিদ্ধান্তকে শিল্প ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন নির্মাতা, শিল্পী ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা।
২০ জুলাই উত্তরা সেক্টর-৪ কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে শুটিং হাউসের মালিকদের বাড়ি ভাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শুটিংয়ের কারণে রাস্তায় জনসমাগম, যান চলাচলে বিঘ্ন এবং বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও, আবাসিক এলাকায় এ ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে নীতিমালার পরিপন্থি বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং সেক্টরের পরিবেশ ও সুনাম রক্ষায় হাউসের মালিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করা হয়। সমিতিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী গণমাধ্যমকে এই চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। উত্তরা সেক্টর ৪ এলাকায় লাবণী-৪, লাবণী-৫ ও আপনঘর-২ নামে তিনটি শুটিং হাউজ রয়েছে।
এই নোটিশের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নাট্য নির্মাতা, অভিনেতা এবং বিনোদন অঙ্গনের অন্যান্য তারকারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’ এর সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু এই নোটিশকে ‘পরিকল্পিত মিথ্যা’ দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, শুটিং হাউজ মানেই হচ্ছে নিরিবিলি, নয়েজের (হট্টগোল) সঙ্গেই আমাদের শত্রুতা। কারণ শুটিংয়ে আমরা কখনও নয়েজটা কাভার করতে চাই না। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই এলাকায় আবাসিক হোটেল এবং স্কুলও রয়েছে, যা সমিতির অভিযোগের অসারতা প্রমাণ করে। অপু এই নোটিশকে আমাদের সংস্কৃতির ওপরে যে নানা ধরনের হামলা হচ্ছে, তারই একটা অংশ হিসেবে অভিহিত করেন এবং প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ (লিগ্যাল অ্যাকশন) নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
অভিনয়শিল্পী সংঘের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও অভিনেতা রওনক হাসানও সমিতির এই অভিযোগকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় নানান রকম অফিস হয়। শত শত স্কুল হয়, মাল্টিটাইপ ব্যবসা হয়। শুধু শুটিংয়ে সমস্যা! তিনি আরও জানান যে, আগেও এ ধরনের চেষ্টা হয়েছে এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন এবং পুলিশ প্রশাসন মিলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে সমাধান করেছেন। এবারও একই ধরনের সমাধানের আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অভিনেতা ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি শহিদুলজ্জামান সেলিম হঠাৎ করে শুটিং বন্ধের নির্দেশনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, একটা হাউজে অনেক ধারাবাহিকের শুটিং চলে, অনেক কন্টিনিউটি আছে। তাই হঠাৎ করে বললেই হয় না, একটা সময় দিয়ে বন্ধের চিঠি দিতে পারত। ডিরেক্টরস গিল্ড এর প্রতিবাদ জানিয়ে আজই চিঠি দেবে বলেও জানান তিনি এবং হাউসের মালিকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল হাসান বলেন, এই শুটিং হাউজে বহু ধারাবাহিক নাটকের কাজ চলছে। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে ধারাবাহিকতায় সমস্যা হবে। তিনি জানান , বিষয়টি নিয়ে তারা সকল সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং এরপর উত্তরা কল্যাণ সমিতির সঙ্গে বসার পরিকল্পনা রয়েছে।
নির্মাতা তপু খান এই নিষেধাজ্ঞাকে শিল্পসংস্কৃতি বিকাশে বাধার শামিল বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যদি কোনো ত্রুটি বা ভুল-বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। তাই বলে সরাসরি নিষেধাজ্ঞাকে ভালো চোখে দেখছি না।
শিল্পীরা এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি উত্তরা কল্যাণ সমিতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন