

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার দিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোপের মুখে পড়েছেন অভিনেত্রী ও প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বুলডোজার নিয়ে যাওয়া ছাত্র-জনতাকে ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে দেওয়া এক স্ট্যাটাসের জেরে তার বিরুদ্ধে ফুঁসছে নেটদুনিয়া।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড ও আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। এ রায় ঘোষণার আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আবার ভাঙচুর চালাতে ট্রাকে করে দুটি বুলডোজার নিয়ে জড়ো হন ছাত্র-জনতা। সেখানে তারা হাসিনার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মেহের আফরোজ শাওন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে তিনি ৩২ নম্বরে বুলডোজার নিয়ে যাওয়া জনতাকে ‘রাজাকার’ বলে অভিহিত করেন। তার এ মন্তব্যের পরই সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। নেটিজেনরা তাকে ‘আওয়ামী কালচারাল ফ্যাসিস্ট’, ‘ভারতীয় গুপ্তচর’ এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
শাওনের এই স্ট্যাটাসের নিচে এবং বিভিন্ন শেয়ার করা পোস্টে হাজারো মানুষ বিরূপ মন্তব্য করেছেন। অনেকেই তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
দিনাত জাহান মুন্নি শাওনের পোস্টের জবাবে লিখেছেন, ‘৩২ নম্বর তো, তাই ৩২ বার ভাঙতে হবে।’ নাসির উদ্দিন খান ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘সাহস থাকলে আজ ৩২ নম্বর আয়।’
শাওনকে ‘ভারতীয় এজেন্ট’ ও ‘গুপ্তচর’ আখ্যা দিয়ে অনেকেই কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন। রুবেল কানিস নামে একজন লিখেছেন, ‘শাওন ভারতের একজন গুপ্তচর হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। তার জমি, ব্যাংক ব্যালেন্স জব্দ করা হোক।’ ফজলে রাব্বিও তাকে ‘ভারতীয় এজেন্ট’ বলে অভিহিত করেছেন।
আল আমিন সোহাগ মন্তব্য করেছেন, ‘শাওন হয়তো কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছে, এজন্য ধানমন্ডি ৩২ নিয়ে এত কান্নাকাটি করছে।’ সাব্বির, জামাল আজিজ ও শরীফুল ইসলামের মতো অনেক নেটিজেন উল্টো শাওনের বাসাতেই বুলডোজার নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
দিদারুল ইসলাম বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে লিখেছেন, ‘শাওন, এরকম কথা বলে বাসায় থাকতে পারছে—এটাই হাসিনামুক্ত নতুন বাংলাদেশ। হাসিনার আমলে যদি আওয়ামীবিরোধী এরকম কথা বলতো, তবে এতক্ষণে থানায় অথবা গুম ঘরে থাকতে হতো।’
মুহাম্মদ আল আমিন হোসাইন শাওনকে ‘শাহবাগী’ উল্লেখ করে তার শাস্তি দাবি করেছেন। আফিয়া সিদ্দিকা ও মারুফ হোসাইন প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার কেন এখনো তাকে গ্রেপ্তার করছে না। আব্দুল বাসের ও এসকে সবুজ হোসেনের মতো অনেকেই তাকে ‘কুলাঙ্গার’ ও ‘খুনি হাসিনার দোসর’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
মাকসুদ আলম পাটোয়ারী ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘এই ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্টটিকে কেউ ৩২ নিয়ে ছেড়ে দাও, ৩২ থেকে তার কান্নার শব্দে যেন আওয়ামী লীগের ঘুম ভাঙে!’
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল ক্ষুব্ধ জনতা। আজকের রায়ের পর সেখানে পুনরায় বুলডোজার নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় শাওনের এই প্রতিক্রিয়া নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে।
মন্তব্য করুন