ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, দুবাই থেকে

জলবায়ু সম্মেলনে তেলের যুগের অবসান ঘটানোর চুক্তি সম্ভাবনা

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

আজ কপ-২৮ এর ষষ্ঠ দিনে আদিবাসী জনগন বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আদিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গ সহ অন্যান্য ফ্রন্টলাইন কমিউনিটির নেতারা ক্ষুব্দ হয়ে বলেন, আদিবাসী প্রতিনিধিদের তুলনায় অন্তত ৭ গুন বেশী জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্টের উপস্থিতি রয়েছে কপ-২৮ সম্মেলনে। আদিবাসী নেতারা আরও বলেন, অগ্নিনির্বাপক কনভেনশনে অগ্নিসংযোগকারীদের উপস্থিতির কোন যৌক্তিকতা নেই। এছাড়াও তারা জলবায়ু আলোচনা থেকে বড় দূষণকারীদের বের করে দেওয়ার আহ্বান জানান।

উল্লখ্য যে, কিক বিগ পলিউটার্স আউট (কেবিপিও) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর শার্ম এল শেখ এ অনুষ্ঠিত কপ-২৭ এর তুলনায় এই বছর দুবাই জলবায়ু সম্মেলনে রেকর্ড পরিমান জীবাশ্ম জ্বালানী লবিস্টের উপস্থিতি বেড়েছে। যেখানের কপ-২৭ উপস্থিতির পরিমান ছিল ৬৩৬ জন এইবার কপ-২৮ এর উপস্থিতিতি প্রায় ৪ গুনে বেড়ে ২৪৫৬ তে দাঁড়িয়েছে। লবিস্টরা শেল, টোটাল এবং এক্সনমোবিলের মতো তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলির স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অপরদিকে এইবারে কপ-২৮ সম্মেলনটি অন্যতম জীবাশ্ম জ্বালানী উৎপাদনকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত দ্বারা আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে বৈশ্বিক জ্বালানী চাহিদাতে জীবাশ্ম জ্বালানীর স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রাখার পরিকল্পনার কোন গোপনীয়তা রাখা হয়নি। জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনায় কর্পোরেট অ্যাক্সেস এবং তদবির নতুন কিছু নয়। উপরন্তু এটি শুধু জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি যেমন অর্থ, কৃষি এবং পরিবহণের মতো বড় বড় শিল্পও গভীরভাবে জড়িত রয়েছে। কর্পোরেট অ্যাকাউন্টেবিলিটি গবেষণা পরিচালক র্যাচেল রোজ জ্যাকসন বলেন, যদি কপ-২৮ জীবাশ্ম জ্বালানির বন্ধের জন্য কার্যকর ভূমিকা না রাখতে পারে; তাহলে আমরা জানি কাকে দোষ দিতে হবে। আমরা ক্ষুব্ধ, আমাদের বার বার ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে কেন জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বায় নিতে হবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল এর গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রি ক্যাম্পেইন ম্যানেজার ডেবিট টং বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে ৬০ শতাংশ জীবাশ্ম জ্বালানি ভূগর্ভস্থের ভিতরে থাকাই ভালো এতে করে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি এর মধ্যে বজায় রাখা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন ওয়েল চেঞ্জের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, আন্তর্জাতিক প্রধান তেল এবং গ্যাস কোম্পানিগুলোর কেউই জলবায়ু সমস্যা সমাধানের জন্য শ্রুতিবদ্ধ নয়। যদিও এইবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮-এ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কাজ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তথাপি জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলো যদি কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন এবং অন্যান্য গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন বন্ধ না করে তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ব্যর্থ হবে। তাই এখনই সঠিক নিরীক্ষা, মনিটরিং, রিপোর্টিং এবং ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে ন্যায্য এবং দ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালনী পোড়ানোর মাধ্যমে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বায়ুমণ্ডলে ১.১% বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয়েছে, যেখানে চরম জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় আমাদের আরও বেশী সচেতন হওয়ার দরকার ছিল। তবে আশার কথা হল- অন্যতম তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব বলেছে তারা কার্বন ক্যাপচার ও স্টোরেজের জন্য সকল সুযোগই কাজে লাগাতে চায়। অপরদিকে চায়না পৃথিবীর অন্যতম সর্ববৃহৎ নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদক ও নবায়নযোগ্য শক্তির সরঞ্জামাদির সরবরাহকারী হওয়া সত্ত্বেও দেশটি নবায়নযোগ্য শক্তি ৩ গুণ করার প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করেনি।

শীতাতপ সম্পৃক্ত দূষণ কমানোর লক্ষে জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্রামের গ্লোবাল কুলিং অঙ্গীকার নামক একটি চুক্তি বাস্তবায়নের চেস্টা করছে। যেখানে আন্তর্জাতিক পারস্পরিক সহযোগীতার মাধ্যমে ২০৫০ সালের মধ্যে শীতাতপ প্রযুক্তির দূষণ ৬৮% কমানো এবং টেকসই শীতাতপ ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে দূষনের মাত্রা ৫০% কমিয়ে আনার উদ্দ্যেগ নেওয়া হয়েছে। এই চুক্তিতে এখন পর্যন্ত ৫০টি দেশ স্বাক্ষর করেছে।

জার্মানির পরিবেশমন্ত্রী মারিয়া সুজানা মোহাম্মদ বলেন, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, এর জন্য অর্থনৈতিক যোগান ঠিক রাখতে হবে, গ্যাপ গুলো খুজে বের করতে হবে এবং প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধানে যেতে হবে।

কপ-২৮ এর ষষ্ঠ দিনে ৭০ জনের অধিক গুরুত্বপূর্ণ আমন্ত্রিত অতিথি গ্লোবাল রেজিলেন্ট এনার্জি ট্রানজিশনের সমাধানের জন্য যুক্ত হয়েছেন। যেখানে ক২৮-এর চূড়ান্ত চুক্তির খসড়াতে "জীবাশ্ম জ্বালানি ফেজ আউট" প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে, যার ফলে তেলের যুগের অবসান ঘটানোর মত প্রথম বৈশ্বিক চুক্তি সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞগণ।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লাকী সাউন্ড, অনলাইনে দেশের প্রথম বিনোদনের ফেরিওয়ালা

রাবি উপাচার্যের পাকিস্তান সফর বাতিল

অভিনেতা মুকুল দেবের মৃত্যুর কারণ জানালেন ভাই

চলতি বছর করোনায় চট্টগ্রামে প্রথম মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১০

ইরানের সঙ্গে আকাশ ও স্থলপথ বন্ধ করল পাকিস্তান

খালে মিলল মডেলের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ

পটুয়াখালীতে ডেঙ্গুতে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

এবার মধ্যপ্রাচ্যের পথে মার্কিন রণতরী

বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ‘ভয়ংকর’ প্রতারণার ফাঁদ

চৌগাছার সেই শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

১০

প্রেমে রাজি না হওয়ায় স্কুলছাত্রীকে হত্যা করে প্রতিবেশী

১১

নারী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ কখন, কোথায়?

১২

গলের টেস্টের আগে মিরাজকে ঘিরে উদ্বেগে বাংলাদেশ

১৩

বগুড়ায় পিস্তলসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

১৪

ডিভোর্স নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে সালমান খান

১৫

বিছানার ওপর পড়ে ছিল সুমির অর্ধগলিত মরদেহ

১৬

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, পাল্টা হুঁশিয়ারি ইসরায়েলের

১৭

যে বিষয়টি গোপন রাখতে চান শান্ত

১৮

‘ইরানের সক্ষমতায় বিস্মিত ইসরায়েল’

১৯

বড় সুখবর পেলেন শিক্ষকরা 

২০
X