আগামী ৫ বছরের মধ্যে সরকার পরিবেশ দূষণ ও বায়ুদূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয় এমপি। আজ ২০ মার্চ, বেুধবার) প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এর সেমিনার কক্ষে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং শিশু ও যুব ফোরামের যৌথ আয়োজনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তানভীর শাকিল জয় এমপি বলেন, বর্তমান সরকার বিশেষ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বায়ুদূষণসহ সার্বিক পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যাপক কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু পানি ছিটিয়ে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। এটি সাময়িক সমাধান আমাদের দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে, আমাদের বায়ুদূষণের উৎসগুলোকে বন্ধ করতে হবে। বর্জ্য পুড়িয়ে যেন বায়ুদূষণ না হয় সেজন্য বর্জকে সম্পদের পরিণত করতে হবে যার আর্থিক মূল্য থাকবে, ফলে মূল্যবান বর্জ্য কেউ পুড়িয়ে লোকসান করবে না।
আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ ইস্যুতে তিনি বলেন, এটি কেউ চাইলে সহজে নিরসন করতে পারবে না। বায়ুপ্রবাহ কোনো বাধা মানে না। এটি প্রাকৃতিক নিয়মে চলে। জিওপলিটিক্যাল দূষণগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। পরিবহনের বায়ুদূষণ কমানোর জন্য তিনি জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক পরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেন এবং পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক ভিহিকল ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ইলেকট্রিক ভিহিকল নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এই খাতে ভ্যাট ট্যাক্স কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বায়ুদূষণের ভয়াবহতা উল্লেখ করে বলেন, নির্মল বায়ু মানুষের অধিকার কিন্তু ঢাকা শহরের অধিবাসীরা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত। জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুতে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে যা বায়ুর গুণগত মান নষ্ট করছে। তাই জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা গেলে সবার জন্য নির্মল বায়ু এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দার আলী (যুগ্ম সচিব) বলেন, আমি বিশ্বাস করি বায়ুদূষণ রোধে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ আরোও জোড়ালো করা উচিত। বায়ুদূষণ রোধের জন্য প্রাপ্ত বরাদ্দসমূহ সঠিকভাবে তদারকি করতে হবে এবং তার যথাযথ ব্যবহার ও নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ হতে রাস্তার ধুলাদূষণ কমাতে প্রতিদিন ২০টি গাড়ি রাস্তায় পানি ছিটানোর কাজ করছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা বলেন, আমাদের এখন সব থেকে বেশি প্রয়োজন সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, যাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুমোদনবিহীন যানবাহন রাস্তায় চলাচল না করতে পারে যা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। এ বিষয়ে কাজ করার জন্য বিআরটিএ এবং ট্রাফিক পুলিশকে সমন্বিত ভাবে কাজ কাজ করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়েও বায়ুদূষণ রোধে কাজ করতে হবে। বসতবাড়ি ও কর্মস্থলের বর্জ্য সঠিক স্থানে এবং সঠিকভাবে নিষ্কাশন করতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ের উদ্যোগসমূহ সরকারি কাজকে ত্বরান্বিত করতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। আমরা সবাই কাজ করব কিন্তু নেতৃত্ব দিবে সরকার।
অনুষ্ঠানের আরও উপস্থিত ছিলেন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা ইসলাম ও হুমায়ুন কবির, ক্যাপসের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মারজিয়াত রহমান, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর- ফিল্ড প্রোগ্রাম অপারেশন মঞ্জু মারীয়া পালমা, সিনিয়র ম্যানেজার আরবান প্রোগ্রাম- জোয়ানা ডি'রোজারিও, ডা. সন্তোস কুমার দত্ত, ডমিনিক সেন্টু গোমেজ, মীর রেজাউল করিম, মানস বিশ্বাস, জোনাস ক্লেরি কস্তা, শিশু ও যুব ফোরামের সদস্যবৃন্দ সহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।
মন্তব্য করুন