বেশ কিছু সময় একভাবে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকলে অথবা হাত-পায়ে চাপ পড়লে ঝিঁঝি ধরার সমস্যা হয়। এ সমস্যায় কমবেশি সবাই ভোগেন। এ ক্ষেত্রে পরে হাত-পা নাড়ানো কষ্টকর হয়ে ওঠে, অবশ বোধ হয় ও যন্ত্রণা করে।
দীর্ঘক্ষণ এক ভঙ্গিতে থাকার ফলে হাত-পায়ের পেশিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে স্নায়ুর ওপরে চাপ পড়ে। এর ফলে শরীরের ওই অংশ থেকে যেসব তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছানোর কথা ছিল, তা বাধাগ্রস্ত হয়। একই সঙ্গে স্নায়ুগুলোও হৃৎপিণ্ড থেকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পাওয়াতে বিঘ্ন ঘটায়; রক্ত সরবরাহকারী শিরার ওপর চাপ পড়ে।
এ রকম পরিস্থিতি থেকে যখন চাপ অপসারিত হয়, তখন একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ রক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রবাহিত হয় এবং একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ তথ্য মস্তিষ্কে প্রবাহিত হতে শুরু করে। আর তখনই শরীরের ওইসব অঙ্গে ঝিঁঝি ভাব অনুভূত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এ রোগের নাম ‘টেম্পোরারি প্যারেসথেসিয়া’।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক জানিয়েছেন, ভিটামিন ‘বি’-১২-এর অভাবেও হাত-পায়ে অসাড়তা ও ঝিঁঝি ভাব হতে পারে।
এ বিষয়ে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ মোস্তাফিজ শফিক কালবেলা অনলাইনকে বলেন, ‘সাধারণত মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত সমস্যা থেকে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইসিস বা লাম্বার স্পন্ডাইলোসিসের কারণে হাতে পায়ে ঝিঁঝি ধরার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া হাতে বা পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে পেরিফেরাল আর্টারাল ডিজিজ হিসেবে ঝিঁঝি ধরতে পারে। এ রকম ক্ষেত্রে শরীরের ওই অংশে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ায় মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে ঝিঁঝি ধরে থাকে।’
প্রথমত, নির্দিষ্ট অংশে চাপ প্রয়োগ হওয়ার মিনিটখানেক পর তিন থেকে চার মিনিটের জন্য স্থায়ী হওয়া অস্বস্তিকর অনুভূতিকে ‘কমপ্রেশন টিঙ্গলিং’ বলা হয়।
দ্বিতীয়ত, এই ধাপ সাধারণত শুরু হয় ১০ মিনিট পর। এ সময়ে হাতে বা পায়ে অসাড়তা বোধ হয় এবং যতক্ষণ স্নায়ুর ওপর চাপ থাকে, ততক্ষণ এই অনুভূতি থাকে।
তৃতীয়ত, এই ধাপটি শুরু হয় চাপ অপসারণ করার পর। এই অংশটিকেই ইংরেজিতে ‘পিনস অ্যান্ড নিডলস’ বলা হয়।
১. পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাবে। ২. কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসার ক্ষেত্রে। ৩. সিসা বা রেডিয়েশনের মতো বিষাক্ত বস্তুর সংস্পর্শে এলে। ৪. স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বিশেষ করে কোনো অসুস্থতা বা আঘাতের পর। ৫. এইচআইভির ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধ বা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে।
# মাথা এপাশ থেকে ওপাশে দুলান কিছু সময়ের জন্য মাথা এপাশ থেকে ওপাশে দুলালে ঝিঁঝি ধরা সমস্যা অনেকটাই কেটে যায়। # দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন মিনিটখানেক হাঁটাহাঁটি করলেও এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। # অঙ্গটি টানটান করে রাখা ঝিঁঝি ধরলে সাময়িকভাবে অসাড় হয়ে যাওয়া অঙ্গটি টানটান করে রাখলে সাধারণত কিছুক্ষণের মধ্যে দ্রুত ওই অঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়।
ঝিঁঝি ধরার মতো উপসর্গ যদি দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ ছাড়া কোনো অঙ্গে নিয়মিত ঝিঁঝি ধরার ঘটনা ঘটলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন