

বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় ফুসফুসের ক্যানসার এখন দ্রুত বাড়ছে। অনেক সময় রোগটি দেরিতে ধরা পড়ে শুধু কয়েকটি ভুল ধারণার কারণে। চিকিৎসকেরা মনে করেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারাই জীবন বাঁচানোর মূল উপায়। তাই এসব ভুল ধারণা ভাঙা জরুরি।
চলুন ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে আমাদের ভুল ধারণাগুলো জেনে নিই।
ধূমপান বড় কারণ হলেও এটাই একমাত্র কারণ নয়। প্রায় ২০% ফুসফুসের ক্যানসার দেখা যায় এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যারা কখনো ধূমপান করেননি। দীর্ঘদিনের বায়ুদূষণ, অ্যাসবেস্টস বা রাডনের সংস্পর্শে থাকা, পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস, এসবও ঝুঁকি বাড়ায়। তাই নন-স্মোকারদেরও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রয়োজন।
শুরুর দিকে ফুসফুসের ক্যানসার সাধারণত নীরব থাকে। লম্বা সময় ধরে থাকা কাশি, সামান্য শ্বাসকষ্ট বা অকারণে ক্লান্ত লাগা—অনেকে এসবকে সাধারণ সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু এগুলোও ক্যানসারের সংকেত হতে পারে। লো-ডোজ সিটি স্ক্যান অনেক আগেই টিউমার শনাক্ত করতে পারে।
বেশিরভাগ কাশি ক্ষতিকর নয়, কিন্তু যদি তিন সপ্তাহের বেশি থাকে, সাথে রক্ত দেখা দেয় বা ওজন কমে—তাহলে দেরি না করে পরীক্ষা করা উচিত। সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ না করলে ব্রঙ্কোস্কপি বা সিটি স্ক্যান প্রয়োজন হতে পারে, কারণ অনেক সময় এক্স-রেতে টিউমার ধরা পড়ে না।
বর্তমান চিকিৎসা অনেক উন্নত। টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি এবং প্রিসিশন মেডিসিন রোগীর জেনেটিক তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করে। এছাড়া মিনিমালি ইনভেসিভ ও রোবটিক সার্জারি রোগীর দ্রুত সেরে ওঠার সুযোগ বাড়ায়।
বয়স বেশি হলে ঝুঁকি বাড়ে ঠিকই, কিন্তু তরুণরাও সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। জেনেটিক কারণ, দূষণ, বা ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শ তরুণদের মধ্যেও এই রোগ তৈরি করতে পারে। তাই ঝুঁকি থাকলে বয়স যাই হোক, সময়ে স্ক্রিনিং জরুরি।
ফুসফুসের ক্যানসার সম্পর্কে ভুল ধারণা আমাদের অনেক সময় বিপদে ফেলে। রোগটি যত দ্রুত শনাক্ত হয়, চিকিৎসার ফল তত ভালো হয়—এটাই চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা। তাই কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অকারণে ক্লান্তি মতো সাধারণ লক্ষণও অবহেলা করা ঠিক নয়।
ধূমপান, দূষণ বা জেনেটিক ঝুঁকি, যে কারণই হোক, সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফুসফুসের ক্যানসার থেকে সুরক্ষার সবচেয়ে সহজ পথ। সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব।
সূত্র : এই সময় অনলাইন
মন্তব্য করুন