বিশ্বব্যাপী মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস উপলক্ষে কল্যাণপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে এক ইন্টারেক্টিভ সচেতনতামূলক সেশনের আয়োজন করে পিএসডিআই কনসালট্যান্সি ও কল্যাণপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ।
বুধবার (২৮ মে) সকালের এ আয়োজনে হাইজিন পার্টনার হিসেবে ছিল স্টে সেফ স্যানিটারি ন্যাপকিন।
প্রতি বছর ২৮ মে বিশ্বব্যাপী ‘মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস’ পালিত হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আসুন, সবাই মিলে গড়ি, মাসিক বান্ধব পৃথিবী’।
‘মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এ আয়োজনে ৪০০ ছাত্রী অংশগ্রহণ করে। স্কুলভিত্তিক এই ক্যাম্পেইনে এক হাজার ২০০ ছাত্রী মাসিক স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত তথ্যাবলি সম্পর্কে অবহিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ শাহনাজ বেগম বলেন, যে বয়সে মেয়েদের মাসিক শুরু হয় সে বয়সে বেশিরভাগ মেয়েরাই ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী থাকে তাই ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষকদের এ ব্যাপারে ছাত্রীদের সাথে আন্তরিকতার সহিত কথা বলা বা তাদেরকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।
পিএসডিআই কনসালট্যান্সির পরিচালক (ব্র্যান্ড ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) মো. ইসহাক ফারুকী বলেন, মাসিক স্বাভাবিক জীবনচক্রের একটি অংশ তাই, এটি কিশোরী বয়সে (১০-১৪) বছরে শুরু হয় তাই মাসিক নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
এ আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন, উন্নয়নকর্মী ও চিকিৎসক ডা. পারভীন আক্তার, চিকিৎসক ডা. তনিমা মিতিলদা ঘোষ, শিশু মনোবিজ্ঞানী আইরিন পারভিন তামান্না, পিএসডিআই-এর ব্যবস্থাপক (কমিউনিকেশন ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) মানস মিস্ত্রি এবং ব্যবস্থাপক (আর্টস এন্ড কালচার) তানজিমা তাবাচ্ছুম এশা।
আলোচনা পর্বে কিশোরীরা তাদের মাসিক সংক্রান্ত নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কথা প্রকাশ করে এবং উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রাসঙ্গিক পরামর্শ গ্রহণ করে। এই সচেতনতামূলক আয়োজনের পূর্বে পিএসডিআই কনসালট্যান্সি ও বিদ্যালয় যৌথভাবে একটি জরিপ পরিচালনা করে, যা মাসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও অভ্যাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরে।
জরিপের প্রধান তথ্যসমূহ: • ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ ছাত্রী স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে এবং ৬৬শতাংশ মা এটি সরবরাহ করেন। • ১০ দশমিক ৫ শতাংশ ছাত্রী প্যাড ডিসপোজাল বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখে, যা উদ্বেগজনক। • ৭৯ দশমিক ৭ শতাংশ কিশোরীর মাসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রথম জ্ঞানের উৎস তাদের মা। তবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ মেয়ে মাসিক নিয়ে আলোচনা করে না। আবার তারই বয়সী বান্ধবীর সঙ্গে আলোচনা করে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ মেয়ে। • ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ ছাত্রী কোনো ধরনের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে না। • ৬৬ শতাংশ কিশোরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কোনো পোস্ট পড়ে না।
এই তথ্যগুলো কিশোরীদের মধ্যে মাসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। সুপারিশসমূহ: • পাঠ্যক্রমে মাসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। • বিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। • স্যানিটারি প্যাড ব্যবস্থাপনা ও সঠিক ডিসপোজাল বিষয়ে কার্যকর সচেতনতা কার্যক্রম গ্রহণ। • পরিবারভিত্তিক আলোচনার পরিসর বাড়াতে বাবা, ভাই ও বন্ধুদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা। • সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিবাচক প্রচারণা চালানো এবং কিশোরীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
এই আয়োজনের মাধ্যমে মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চলমান ট্যাবু ভাঙতে এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে তথ্যভিত্তিক, ইতিবাচক ও সমৃদ্ধ আলোচনা গড়ে তোলার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন