

ফলের মধ্যে যদি একটিকে ‘রত্নভান্ডার’ বলা যায়, তবে সেটা নিঃসন্দেহে ডালিম। এর লালচে দানা বা আরিলগুলো শুধু চোখের আরামই নয়, ভেতরেও লুকিয়ে আছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। প্রাচীনকাল থেকেই ডালিমকে বলা হয় স্বাস্থ্যরক্ষার প্রাকৃতিক ওষুধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন নিয়ম করে এই ফলটি খেলে শরীরে ঘটে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন। আসুন জেনে নিই, টানা এক মাস ডালিম খেলে শরীরে কী কী অবিশ্বাস্য উপকার হয়।
১. হৃদ্যন্ত্র পায় বাড়তি সুরক্ষা
ডালিম হৃদ্যন্ত্রের অন্যতম প্রিয় ফল। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (NIH)-এর এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, টানা আট সপ্তাহ ডালিমের রস পান করলে রক্তচাপ ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে যায়, পাশাপাশি ‘ভালো’ এইচডিএল কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। এতে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে এবং রক্তনালির প্রদাহও হ্রাস পায়।
২. ত্বকে আসে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা
২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ডালিমের নির্যাস গ্রহণ ত্বকের কোলাজেন ধরে রাখে এবং ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমায়। এতে বলিরেখা কমে এবং ত্বক হয় মসৃণ ও প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল।
৩. শরীরের প্রদাহ কমে যায়
ডালিমে থাকা পিউনিকালাজিন নামের উদ্ভিজ যৌগ প্রদাহবিরোধী হিসেবে কাজ করে। তাই নিয়মিত এই ফল খেলে শরীরে জমে থাকা প্রদাহ কমে এবং ক্লান্তি ও নানা ধরনের ব্যথা প্রশমিত হয়।
৪. স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ে
২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ডালিম খেলে বা রস পান করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও মনোযোগ বাড়ে। যারা এক বছর ধরে নিয়মিত ডালিমের রস পান করেছেন, তাদের শেখার ও মনে রাখার ক্ষমতা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে।
৫. হজমশক্তি ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে
ডালিম প্রাকৃতিক প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়। এতে হজম প্রক্রিয়া মসৃণ হয়, গ্যাস-অম্বল কমে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
৬. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তে শর্করাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য ডালিম বেশ উপকারী। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে এটি ওষুধের বিকল্প নয়, বরং সুষম খাদ্যের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
৭. ব্যায়ামের পর দ্রুত পেশি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে
যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য ডালিম হতে পারে প্রাকৃতিক রিকভারি ড্রিঙ্ক। গবেষণায় দেখা গেছে, ডালিমের নির্যাস ক্লান্তি দূর করে, পেশিতে প্রদাহ কমায় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ফলে ব্যায়ামের পর দ্রুত শক্তি ফিরে আসে।
৮. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
একটি মাঝারি আকারের ডালিমে থাকে দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন-সি-এর প্রায় ৩২ শতাংশ। এছাড়া এতে রয়েছে ফোলেট, পটাশিয়াম ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে সর্দি–কাশিসহ মৌসুমি অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা দেয়।
৯. কিডনি ভালো রাখে ও টক্সিন দূর করে
ডালিমের নির্যাস শরীরের খনিজ ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কিডনিতে পাথর জমার প্রবণতা কমায়। নিয়মিত খেলে মূত্রতন্ত্র পরিষ্কার থাকে ও শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন সহজে বের হয়ে যায়।
১০. ওজন কমাতে সাহায্য করে
NIH-এর উদ্ধৃত এক গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ৩০ দিন ডালিমের নির্যাস গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ওজন, রক্তে গ্লুকোজ, ইনসুলিন ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে।
সারকথা
ডালিম শুধু একটি ফল নয়, এটি প্রাকৃতিকভাবে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা করে, ত্বক ও হৃদ্যন্ত্র থেকে শুরু করে মস্তিষ্ক, কিডনি, এমনকি ওজন নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই লালচে রত্ন যোগ করলেই পরিবর্তনটা নিজেই টের পাবেন!
সূত্র : এনডি টিভি
মন্তব্য করুন