

এক গ্লাস গরম দুধে প্রাকৃতিক গুড় মিশিয়ে পান, এ যেন আমাদের উপমহাদেশের ঘরোয়া স্বাস্থ্যরীতির একটি চিরাচরিত অংশ। দিনের শেষে শরীর ও মনকে আরাম দিতে অনেকেই আজও এই উষ্ণ পানীয়টিকে নিজের রাত্রিকালীন অভ্যাসে যুক্ত রাখেন। ঘরে বানানো হোক কিংবা প্রয়োজন হলে ফুড ডেলিভারি অ্যাপে অর্ডার, এই উষ্ণ পানীয়ের চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, টানা ৩০ দিন যদি প্রতি রাতে দুধ ও গুড় একসঙ্গে পান করেন, তখন শরীরে আসলে কী পরিবর্তন ঘটে? ফল কি সত্যিই পাওয়া যায়, নাকি এগুলো কেবল শুনতে ভালো লাগে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রভাব নাটকীয় নয়, বরং ধীরে ধীরে, কোমলভাবে শরীরের ভেতরে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন তৈরি হয়। আর ঠিক সেখানেই লুকিয়ে আছে দুধ-গুড়ের আসল ম্যাজিক।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, এক মাস নিয়ম করে দুধ-গুড় পান করলে আপনার শরীরে কী কী বদল আসতে পারে।
১. ঘুমের মান ভালো হয়
গরম দুধে রয়েছে ‘ট্রিপটোফ্যান’ নামের একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যা মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। মেলাটোনিনই ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয় না এবং ঘুম গভীর হয়।
আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রিপটোফ্যানসমৃদ্ধ খাবার ঘুমের মান উন্নত করতে পারে। দুধের সঙ্গে গুড়ের মৃদু মিষ্টত্ব যোগ হলে এটি আরও আরামদায়ক একটি নৈশ রিচুয়ালে পরিণত হয়।
২. হজমে স্বস্তি ও গ্যাস-ফাঁপা কমে
গুড় হজমে সহায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। এটি হজম এনজাইম নিঃসরণে সাহায্য করে, যা খাবার ভাঙতে শরীরকে সহায়তা করে। গরম দুধের সঙ্গে গুড় মিশিয়ে খেলে পেট আরাম পায়, ভারী লাগা বা গ্যাস-ফাঁপার সমস্যা কমে। নিয়মিত রুটিনে রাখলে হালকা বদহজমও কমে আসতে পারে।
৩. শরীরে বাড়ে শক্তি ও আয়রনের সরবরাহ
গুড়ে স্বল্পমাত্রায় আয়রনসহ কিছু প্রয়োজনীয় খনিজ থাকে, যা নিয়মিত গ্রহণ করলে সামগ্রিক শক্তি-সঞ্চয়ে সহায়তা করে। যদিও এটি অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা নয়, তবে শরীরের মিনারেল লেভেল বজায় রাখতে সাহায্য করে। রাতে পান করলে সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লান্তি কম অনুভূত হয়। এনার্জি লেভেলও তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে।
৪. মুড ভালো থাকে, স্ট্রেস কমে
উষ্ণ পানীয় শরীরের স্নায়ুতন্ত্রকে স্বস্তি দেয়, এটি বহু গবেষণায় প্রমাণিত। দুধে রয়েছে বি-ভিটামিনসহ এমন কিছু পুষ্টি যা মুড নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশন-এ ২০২৫ সালে প্রকাশিত সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গরম পানীয় ঘুম উন্নত করতে ও স্ট্রেস কমাতে ভূমিকা রাখে। ফলে রাতে দুধ-গুড় পান করার অভ্যাস শরীরকে ‘বিশ্রামের নির্দেশ’ পাঠায়, আর টানা এক মাস পরে মানসিক চাঙ্গাভাব স্পষ্ট হয়।
৫. ত্বক হয় সতেজ ও উজ্জ্বল
গুড়ে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর দুধে আছে প্রোটিন ও ভালো ফ্যাট, যা ভেতর থেকে ত্বককে পুষ্টি জোগায়। নিয়মিত পান করলে ত্বক আরও আর্দ্র দেখায়, স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বাড়ে। এটি কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের মতো দ্রুত ফল দেয় না, তবে অভ্যন্তরীণ পুষ্টির জোগান বাড়ানোর মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনে।
দুধ-গুড় নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
এটি কি ওজন কমায়?
ওজন কমানোর পানীয় নয়। তবে মিষ্টির লোভ কমাতে সাহায্য করতে পারে। পরিমিতি বজায় রাখা জরুরি।
ডায়াবেটিস রোগীরা কি পান করতে পারবেন?
ডায়াবেটিস থাকলে গুড় সীমিত বা এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
কখন পান করা সবচেয়ে উপকারী?
রাতেই সবচেয়ে কার্যকর, কারণ এটি শরীরকে শান্ত করে ঘুমাতে সাহায্য করে। খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে না খাওয়াই ভালো।
বাচ্চারা কি দুধ-গুড় খেতে পারে?
হ্যাঁ, অল্প পরিমাণে। তবে যদি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা সুগার রেস্ট্রিকশন থাকে, তাহলে সাবধানতা জরুরি।
সূত্র : এনডিটিভি
মন্তব্য করুন