

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) শুক্রবার যা ঘটল, তা যেন সময়ের ঘড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে গেল শতবর্ষ পেছনে। অ্যাশেজ সিরিজের চতুর্থ টেস্টের প্রথম দিনেই পড়ে গেল মোট ২০টি উইকেট—অ্যাশেজের ইতিহাসে যা শেষবার দেখা গিয়েছিল ১৯০২ সালের জানুয়ারিতে। ঠিক ১২৩ বছর পর আবারও প্রথম দিনের এমন ধ্বংসাত্মক নাটক ক্রিকেটপ্রেমীদের সামনে হাজির করল এক পুরনো দিনের টেস্ট ক্রিকেট।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার, অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫২ রানে গুটিয়ে গেলেও দিন শেষে এগিয়ে রয়েছে তারাই। কারণ ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধস আরও ভয়াবহ—১১০ রানেই অলআউট। ফলে প্রথম দিনের বিশৃঙ্খলার মধ্যেও ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার লিড দাঁড়ায় ৪২ রান।
এই ঐতিহাসিক দিনটির সাক্ষী ছিল ৯৪,১৯৯ জন দর্শক—যা টেস্ট ক্রিকেটের একদিনে সর্বোচ্চ উপস্থিতির রেকর্ড। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের দর্শকসংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যায় এই বক্সিং ডে টেস্ট।
সবুজাভ উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। সিদ্ধান্তটা শুরুতে সঠিকই মনে হচ্ছিল। ইংলিশ পেসার জশ টাং একের পর এক আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার ভেঙে দেন। ক্যারিয়ারসেরা ৫ উইকেট ৪৫ রানে নিয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়াকে লাঞ্চের আগেই চাপে ফেলেন—৭২ রানেই ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ট্রাভিস হেড, জেক ওয়েদারাল্ড, মার্নাস লাবুশানে ও অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ দ্রুত ফিরে যান।
উসমান খাজা (২৯) কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও বড় জুটি হয়নি। নিচের দিকে মাইকেল নেসার (৩৫) ও ক্যামেরন গ্রিন (১৭) সপ্তম উইকেটে ৫২ রানের জুটি গড়েন। তবে টাং ফিরে এসে পরপর বলে নেসার ও স্কট বোল্যান্ডকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ করেন চা-বিরতির আগেই।
কিন্তু দিনের নাটক তখনও বাকি।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং শুরু হতেই একই উইকেটে তাদের বিপর্যয় আরও দ্রুত ঘটে। মাত্র ১৬ রানের মধ্যেই চার উইকেট হারায় তারা। মাইকেল নেসার (৪/৪৫) ও মিচেল স্টার্কের আগুনে বোলিংয়ে জ্যাক ক্রলি, বেন ডাকেট ও জ্যাকব বেথেল দ্রুত সাজঘরে ফেরেন। জো রুটও শূন্য রানে ক্যাচ তুলে দেন।
এই ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে কিছুটা আলো হয়ে দাঁড়ান হ্যারি ব্রুক। মাত্র ৩৪ বলে ৪১ রানের সাহসী ইনিংস খেলেন তিনি এবং স্টোকসের সঙ্গে যোগ করেন ৫০ রান। কিন্তু স্কট বোল্যান্ড (৩/৩০) ফিরে এসে আবারও ছন্দ ভেঙে দেন। ব্রুক, জেমি স্মিথ ও উইল জ্যাকস দ্রুত বিদায় নিলে ইংল্যান্ডের ইনিংস থামে ৩০ ওভারের মধ্যেই।
দিন শেষে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪ রান তোলে। লিড দাঁড়ায় ৪৬ রানে।
এই ম্যাচের মাধ্যমে বক্সিং ডে টেস্টে এক দিনে সর্বোচ্চ উইকেট পতনের রেকর্ডও নতুন করে লেখা হলো। একই সঙ্গে এটি অ্যাশেজ ইতিহাসে প্রথম দিনেই ২০ উইকেট পড়ার ঘটনা—যা এর আগে ঘটেছিল ১৯০১–০২ মৌসুমে।
ক্রিকেটবিশ্বে খুব কম দিনই আসে, যেদিন একসঙ্গে ইতিহাস, রোমাঞ্চ আর বিশৃঙ্খলা এমনভাবে মিলেমিশে যায়। মেলবোর্নে এই বক্সিং ডে টেস্ট ঠিক তেমনই এক দিন—যা অ্যাশেজের স্মৃতিতে চিরকাল আলাদা হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করুন