সরকারি চাকরিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দাবিতে নিয়োগ পরীক্ষায় নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশ, প্রশ্নপত্রের মানোন্নয়ন এবং দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে চাকরিপ্রত্যাশী একদল শিক্ষার্থী।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘চাকরি সংস্কার আন্দোলন’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
চাকরিপ্রত্যাশীরা বলেন, দেশের সরকারি চাকরিতে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে যোগ্যরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই বিসিএসসহ সব চাকরির প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান তারা। পাশাপাশি প্রশ্নপত্র মানসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ করার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন।
তারা জানান, নন-ক্যাডার বিধি সংশোধন করে উত্তীর্ণ সব প্রার্থীকে চাকরির সুযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ব্যবহৃত সঠিক উত্তর এবং কাট মার্কস ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। তারা আরও বলেন, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি পিএসসি গঠন করতে হবে, যেন প্রশ্নপত্রের মান ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার গুণগত মান বজায় থাকে।
এছাড়াও একই সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা এড়াতে একটি কার্যকর মনিটরিং সেল গঠনের আহ্বান জানান তারা। সরকারি চাকরিতে ‘মাইগ্রেশন স্টাইল’ চালুর দাবি জানিয়ে তারা বলেন, এতে করে পরীক্ষার্থীরা পছন্দমতো পদে স্থানান্তরের সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি ভাইভা পরীক্ষার আগে ক্যাডার চয়েস দেওয়ার ব্যবস্থা রাখার কথাও বলেন আন্দোলনকারীরা।
তারা আরও দাবি করেন, কম খরচে খাতা পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগ থাকা উচিত এবং যারা ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নিয়মবহির্ভূত নিয়োগে চাকরি পেয়েছেন, সে নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, পবিত্র ঈদুল আজহার আগ পর্যন্ত তারা মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মসূচি পালন করবেন না। তবে অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম চলমান থাকবে। দাবি পূরণ না হলে ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জালাল আহমদ বলেন, ‘২০১৩, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা কোটা ব্যবস্থা ৫৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। কিন্তু কেবল কোটা কমালেই হবে না, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকা উচিত।
লেবার পার্টি বাংলাদেশের দলীয় মুখপাত্র মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, চাকরির সব পরীক্ষায় নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশ করতে হবে, মেধার মূল্যায়ন করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়েজিদ খান উল্লাস, গণিত বিভাগের এমএ হানিফ নোমান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মদ আলী, ন্যাশনাল লেবার পার্টির মুখপাত্র মো. শরীফুল ইসলাম এবং সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তফা আল ইহযায প্রমুখ।
মন্তব্য করুন