বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়ে গেছে। অনেকেই নিজেকে ফিট রাখতে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলেন, আবার কিছু মানুষ রাতে খাবার খাওয়াও বন্ধ করে দেন। তাদের ধারণা, রাতে খাবার খাওয়া বন্ধ করলে ওজন কমবে।
তবে, এই ধারণা কি সঠিক? রাতের খাবার বাদ দিলে শরীরের উপকার হয়, না ক্ষতি? আসুন, পুষ্টিবিদের পরামর্শে জানা যাক এর পেছনে প্রকৃত বিজ্ঞান কী।
রাতে খাবার না খাওয়ার নেতিবাচক দিক
বিডিএন পল্লবী ডায়াবেটিস সেন্টারের পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান ডরিন বলেন, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা শরীরের বিপাক ব্যবস্থাকে ধীর করে দেয়। এর ফলে চর্বি জমতে থাকে এবং ওজন কমানোর পরিবর্তে স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে, রাতে খাবার না খেলে পরদিন সকালে ভারী নাশতা করা হয়। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে সকালে ক্লান্তি বোধ হয়, মাথাব্যথা হতে পারে, মনোযোগে অভাব এবং কাজের উৎসাহ কমে যায়। এছাড়া গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা আলসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে, কারণ পাকস্থলীতে দীর্ঘ সময় কিছু না থাকলে অ্যাসিড জমে যায় এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
রাতের খাবার আপনার শরীরের জন্য জ্বালানির মতো। তবে, সঠিক খাবার বেছে নেওয়া জরুরি। পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী, রাতের খাবারে এমন কিছু খেতে হবে, যা সহজপাচ্য এবং শরীরের জন্য উপকারী। উদাহরণস্বরূপ-
রুটি : এক বা দুটি রুটি
সবজি : তাজা সবজি বা সালাদ
প্রোটিন : ডিম, মাছ বা চিকেন
ফল : ফ্রুট সালাদও একটি ভালো বিকল্প
এছাড়া, ভাজাভুজি বা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার রাতে এড়িয়ে চলা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, রাত ৯টার পর খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ, রাতে শরীরের পরিপাক ব্যবস্থার গতি ধীর হয়ে যায় এবং খাবার সহজে হজম হতে সময় নেয়।
ওজন কমাতে শুধু রাতে খাবার খাওয়া বন্ধ করলেই হবে না। পুষ্টিবিদের মতে, সঠিক খাদ্যতালিকা এবং শারীরিক পরিশ্রমের ওপর খেয়াল রাখা উচিত। আপনার খাবারের পরিমাণ, কী খাচ্ছেন, কখন খাচ্ছেন, এগুলো সবকিছু গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য
- সারাদিনে কতবার খাচ্ছেন
- কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন
- কী পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করছেন
এগুলো সবই খেয়াল রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে একটি ডায়েট প্ল্যান নিয়ে চলেন। নিয়মিত সুস্থ থাকার জন্য শারীরিক চর্চা এবং পর্যাপ্ত ঘুমও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য রাতের খাবার একেবারে বাদ দেওয়া উচিত নয়। বরং, রাতের খাবার হালকা এবং সহজপাচ্য হওয়া উচিত। পরিমাণমতো এবং সময়মতো খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ভালো ঘুমই আসলে গোপন উপায়। সুতরাং, রাতে খাবার না খাওয়া কোনো সমাধান নয়; বরং সঠিক খাদ্য এবং জীবনযাত্রার মাধ্যমে আপনি স্বাস্থ্যকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সূত্র : এই সময় অনলাইন
মন্তব্য করুন