

সকালের নাশতা শুধু দিনের প্রথম খাবার নয়- এটি সারাদিনের শক্তি, মানসিক সতর্কতা এবং ভালো স্বাস্থ্যের ভিত্তি। তাই সকালে কী খাচ্ছেন, সেটি আপনার সারাদিনের মুড ও কাজের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে পুষ্টিকর, প্রাকৃতিক ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেছে নিলে দীর্ঘমেয়াদে শরীর সুস্থ থাকে।
মেডিকেল নিউজ টুডে’র প্রতিবেদনে পুষ্টিবিদদের মতে সকালের সেরা খাবারগুলো সহজ ভাষায় এ লেখায় তুলে ধরা হলো। আপনি চাইলে নিজের পছন্দ অনুযায়ী এগুলো মিলিয়ে নিজের পছন্দমতো নাশতা বানাতে পারেন।
ওটমিলে থাকে বেটা-গ্লুকান নামে এক ধরনের ফাইবার, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও আছে। নিয়মিত ওটমিল খেলে অন্ত্র ভালো থাকে এবং টাইপ–২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
চাইলে ওটমিলে ফল, দই বা বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন।
ডিম উচ্চমানের প্রোটিনের অন্যতম সেরা উৎস। পরিমিত পরিমাণে ডিম খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। এটি ক্ষুধা কমায়, শক্তি বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা উন্নত করে। সেদ্ধ, পোচ, স্ক্র্যাম্বল—যেভাবেই খান, ডিম পুষ্টিকর।
বাদামে আছে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, প্রোটিন ও ভালো ফ্যাট। প্রতিদিন একটু বাদাম খেলে হৃদরোগ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমে। টোস্টের সঙ্গে পিনাট বাটার, আমন্ড বাটার বা ক্যাশিউ বাটারও ভালো বিকল্প।
কফির ক্যাফেইন মনোযোগ বাড়ায়, ক্লান্তি কমায় এবং মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, চিনি ছাড়া কফি টাইপ–২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। চিনি বা ক্রিম না দিয়ে, চাইলে নন–ফ্যাট বা উদ্ভিজ্জ দুধ ব্যবহার করুন।
ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, রাসবেরি বা ব্ল্যাকবেরি - সবই কম ক্যালোরির তবে ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার। এগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং প্রদাহ কমায়। দই, ওটমিল বা সিরিয়ালের সঙ্গে এগুলো খুব ভালো মানিয়ে যায়।
তিসিতে আছে ওমেগা–৩, ফাইবার ও প্রোটিন। এটি কোলেস্টেরল কমায়, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। গ্রাউন্ড ফ্ল্যাক্সসিড স্মুদি, দই বা ওটমিলে মিশিয়ে খেলে ভালো।
দই প্রোটিনসমৃদ্ধ, ক্যালসিয়ামযুক্ত এবং প্রোবায়োটিক থাকায় অন্ত্র ভালো রাখে। বেরি, কলা বা বাদামের সঙ্গে দই একটি स्वादिष्ट ও পুষ্টিকর নাশতা হতে পারে।
গ্রিন, ব্ল্যাক, হোয়াইট বা উলং চায়ে থাকে পলিফেনল ও অ্যামিনো অ্যাসিড, যা মন সতর্ক রাখে এবং হজমে সহায়তা করে। চা শরীরকে হাইড্রেট রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কটেজ চিজ প্রোটিন, ভিটামিন ও প্রোবায়োটিকের ভালো উৎস। এটি একা খাওয়া যায়, আবার ফল, বাদাম বা সবজির সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। লবণ কম থাকা কটেজ চিজ বেছে নেওয়াই ভালো।
কলা সহজলভ্য, দ্রুত শক্তি দেয় এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ওটমিল বা বাদামের মাখনের সঙ্গে খেলে পুষ্টিগুণ বাড়ে। সবুজ কলায় থাকা রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ হজমে সহায়তা করে।
হোল গ্রেইনে থাকে প্রচুর ফাইবার যা হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে। হোল-গ্রেইন টোস্ট, ব্রাউন ব্রেড বা রোলড ওটস সকালে খুবই ভালো একটি বিকল্প।
সকালের নাশতা এমন হওয়া উচিত যা শরীরে শক্তি দেয়, দীর্ঘক্ষণ তৃপ্ত রাখে এবং পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর থাকে। ওটস, ডিম, ফল, দই, বাদাম - এই খাবারগুলো আপনার নাশতাকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
দিনটা ভালোভাবে শুরু করতে চাইলে সকালে পুষ্টিকর খাবার বেছে নেওয়ার অভ্যাস করুন, সারাদিনই নিজেকে আরও সতেজ ও সক্রিয় মনে হবে!
মন্তব্য করুন