চুল পড়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যায় বর্তমানে অনেকেই ভুগছেন। আর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রাকৃতিক উপায় খুঁজে দেখাটা অস্বাভাবিক নয়। নানাজনের মুখে শোনা যায়, দুহাতের নখ ঘষলে চুল গজায় — কিন্তু এটা কি সত্যি? না কি শুধুই মানুষের কল্পনা?
যোগ ব্যায়াম ও আয়ুর্বেদ অনুসারে, শরীরের কিছু বিশেষ মুদ্রা বা হাতের ভঙ্গি নিয়মিত অভ্যাস করলে চুল পড়া রোধ এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করা সম্ভব। বিশেষ করে ‘বালায়াম মুদ্রা’ নামে পরিচিত এক ধরণের যোগভঙ্গি নিয়ে অনেকের কৌতূহল আছে — যেখানে আঙুলের নখ একে অপরের সঙ্গে ঘষা হয়।
এই অনুশীলন সত্যিই কাজ করে কি না, তা নিয়েই টাইমস অব ইন্ডিয়া-কে জানিয়েছেন একজন অভিজ্ঞ যোগগুরু। চলুন জেনে নিই, কী বলছেন যোগগুরু হিমালয়ান সিদ্ধ আক্ষর।
নখ ঘষা বলতে আসলে কী বোঝায়?
এই ধারণার ভিত্তি হলো ‘বালায়াম’ নামক একটি। ‘ব্যায়াম’ অর্থ কসরত। দুটি একসাথে মিলিয়ে চুলের ব্যায়াম বুঝায়। এটি আয়ুর্বেদিক তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি।
নখ দুইটি এক সঙ্গে ঘষার মাধ্যমে চুলের লোমকূপে প্রভাব ফেলতে কাজ করে। এর উৎস হলো যোগব্যায়াম ও একুপ্রেশার (চিনা ঐতিহ্যালয় থেকে এসেছে চাপ পয়েন্টের ভাবনা)।
এই পদ্ধতিতে বিশ্বাস করা হয় যে নখের নিচের স্নায়ুকণা স্কাল্পের (মাথার ত্বকের) স্নায়ুদের সঙ্গে জড়িত। আর সেগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হলে রক্ত চলাচল বাড়ে। ফলে চুল গজাতে সাহায্য করতে পারে।
বিজ্ঞান কী বলছে?
বালায়াম নিয়ে এখনো কোনো বড় বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। তবে উপমহাদেশীয় বয়ান অনুযায়ী—বর্তমান চুলের ঘনত্ব বাড়ে, ধূসর চুল কালো হতে পারে, এবং চুলের গুণগত মান উন্নত হয়। এগুলো সাধারণ বাস্তব অভিজ্ঞতা হলেও পর্যাপ্ত গবেষণা নেই।
যা জানা গেছে : স্কাল্প ম্যাসাজের মাধ্যমে রক্তসঞ্চালন বাড়লে চুল গজায়। নখের তলের স্নায়ু উত্তেজিত হলে রক্ত বৃ্দ্ধি পেলেও চুল বেশি স্বাস্থ্যবান হতে পারে বলেও মনে করা হয়।
আমাদের স্নায়ুতন্ত্র দুই ভাগ : কেন্দ্রীয় (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড) ও পেরিফেরাল (অঙ্গভঙ্গি ও সংবেদন)। পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের সোমাটিক বিভাগে আছে এমন একটি মধ্যস্নায়ু, যা নখের কাছে আছে। অন্যদিকে স্কাল্পেও সংশ্লিষ্ট স্নায়ুই আছে। তাই বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবনায় নখ ও স্কাল্পের স্নায়ু সংযোগ থেকে সম্ভাব্য প্রভাব তৈরি হয়।
‘বালায়াম’ চুল পড়া কমায় কি না?
নখ ঘষা নিজেই কোনো চিকিৎসা নয়। কিন্তু এটি একটি রুটিন তৈরি করতে পারে। নিজেকে সময় দেওয়ার ছোট কিছু অভ্যাস। দিনে কয়েক মিনিট নখ ঘষে দেখুন—হালকা চাপ দিয়ে ছোট ছোট স্লাইড করুন, যেন শান্ত ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সময়ের মতো অনুভব হয়।
বালায়াম শুধু স্নায়ুর পাশাপাশি মানসিক চাপও কমায়। চুল পড়ার একটি বড় কারণ স্ট্রেস। সে জন্য এমন রুটিনে মন শান্ত হলে চুলের স্বাস্থ্যও ভালো থাকতে পারে। কোনো ক্ষতি নেই—কিছু সপ্তাহ চেষ্টা করেই দেখতে পারেন চুল পড়া কমে বলে বা নতুন চুল গজানোর মতো কোনো পরিবর্তন আছে কিনা।
চুল গজাতে অন্য উপায় কী কী আছে?
নখ ঘষা যদি শুরু করেন, তবে কিছু অতিরিক্ত পদ্ধতি যুক্ত করতে পারেন।
- নিয়মিত চুল ও স্কাল্পে ম্যাসাজ করুন
- পুষ্টিকর খাদ্য ও সাপ্লিমেন্ট (যেমন ভিটামিন-বি, বায়োটিন, আয়রন) গ্রহণ করুন
- আয়ুর্বেদিক বা প্রাকৃতিক সিরাম ও শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
এছাড়া, বিভিন্ন কোম্পানির কিছু পণ্য আছে যেগুলো চুল ঘন ও শক্তিশালী করতে সহায়ক। সেগুলো আপনার চুলের ধরন অনুসারে ট্রাই করতে পারেন।
নখ ঘষে চুল গজানো—বিষয়টি হয়তো বোকামি মনে হতে পারে। তবে এর পিছনে কিছু বাস্তবিক ধারণা আছে। নখ থেকে স্কাল্পে স্নায়ুর উত্তেজনা ও রক্ত সঞ্চালনের ভাবনা।
বলে রাখা ভালো- এখন পর্যন্ত এর বৈজ্ঞানিক প্রভাব নিয়ে স্পষ্ট প্রমাণ নেই। তবে এটি যদি আপনার মনপ্রাণে শান্তি দেয়, বা চাপ কমায়—তখন এটি চেষ্টা করার মতোই একটা অভ্যাস হতে পারে।
সুতরাং, নখ ঘষে চুল গজানো একটা সহজ, বিনামূল্যে চেষ্টা করার মতো রুটিন হতে পারে। তবে শুধু এটিকেই ভরসা করবেন না—চুলের সুস্থতা চাইলে সামগ্রিক পদ্ধতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
মন্তব্য করুন