নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা পর শাহবাগ থেকে অবরোধ তুলে নিলেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, যে কোনো জায়গায় আন্দোলনকারীদের বাধা দেওয়া হলে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এ সময় জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
পরে রাত ৯টায় দিনের কর্মসূচি স্থগিত করে শাহবাগ ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, বিকেল ৫টার পর রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধের কারণে শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
একই দাবিতে বিকেল সোয়া ৩টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ অন্তত ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামের টাইগার পাস মোড়েও পুলিশের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। তারা দাবি করেন, কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা নবম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। এতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ জেলা কোটা বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়।
পরে ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এতে সরকারি চাকরিতে আবারও কোটা ফিরে আসে।
বিষয়টি আপিলে গেলে গত ৯ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। ৪ জুলাই আপিল বেঞ্চ জানায়, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মামলাটির শুনানি শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ঝুলন্ত কোনো সিদ্ধান্ত তারা মানবে না। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকেলে আবারও ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। একই সঙ্গে জনদুর্ভোগ তৈরি হলে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিতও দেন তিনি।
মন্তব্য করুন