সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীসহ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ সশস্ত্র পৈশাচিক আক্রমণ করে হতাহত করলেও পুলিশ বাহিনী দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে মন্তব্য করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
বুধবার (১৭ জুলাই) সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার সমর্থিত সন্ত্রাসীদের নৃশংস ও ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে এবং প্রধানমন্ত্রীর অপমানজনক তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সরকার সমর্থিত সন্ত্রাসীরা ন্যক্কারজনকভাবে নৃশংস হামলা চালিয়েছে। হামলায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৬ সাধারণ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন, শত শত ছাত্র-ছাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন এবং অনেকের অবস্থা আশংকাজনক। নারী শিক্ষার্থীরাও এই ভয়ংকর হামলার কবল থেকে রক্ষা পায়নি। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে ড্যাব।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চাকরিতে কোটা রেখে পেশাজীবীদের মধ্যে নিজেদের বংশধর তৈরির যে নীল নকশা বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার করেছে তার ফলে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে বৈষম্যজনিত হতাশা।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া কোটা ২০২৪ সালে এসে আবারও চালু হলে স্বাভাবিকভাবেই তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হতাশ করে। এই হতাশা থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ যৌক্তিক দাবিকে গঠনমূলক আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান না করে বরং তাদের নেতিবাচকভাবে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে অভিহিত করা হয়। সম্প্রতি সরকার প্রধানের নেতিবাচক মন্তব্যে ফুঁসে ওঠে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জুলাই সারাদিন সরকার সমার্থিত সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেওয়া হয় নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর। সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের অস্ত্র হাতে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় পৈশাচিক আক্রমণ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করে। এখানে পুলিশ বাহিনী ছিল যথারীতি দর্শকের ভূমিকায়। এ রকম ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ড্যাবের সভাপতি ও মহাসচিব।
তারা বলেন, এসব সন্ত্রাসীর হামলায় আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থীর প্রতি ড্যাবের পক্ষ থেকে সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। ড্যাব নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে এবং প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এমন ঘৃণ্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এসব হামলাকারীর যথাযথ বিচার দাবি করছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এমন তাচ্ছিল্যপূর্ণ ও অপমানজনক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দেশের উন্নয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাই দেশের স্বার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পেশি শক্তির ব্যবহার রহিত করে শান্তিপূর্ণ, আতঙ্কমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ আনয়ন করা অতীব জরুরি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চাকরিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সব ধরনের অযৌক্তিক কোটা প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানাচ্ছে ড্যাব।
মন্তব্য করুন