কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ এএম
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

দেলোয়ারের কবর ছুঁয়ে প্রতিদিনই আর্তবিলাপ করেন মা

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

জুলাই বিপ্লবে নিহত দেলোয়ারের কবর ছুঁয়ে প্রতিদিনই আর্তবিলাপ করে আঁচল ভিজাচ্ছেন মা জিন্নাতুননেছা। ছেলেহারা মায়ের এমন আহাজারিতে শোকে নিস্তব্ধ হয়ে আছে কাচিয়া গ্রামের জনপদ।

বাসসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হতভাগ্য মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৫)। দেলোয়ারের মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস চলে গেলেও এখনো কান্না থামেনি ৬৯ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা জিন্নাতুন নেছার। বাড়ির পাশে ছেলের কবরের পাশে ছুটে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পাঁচ ছেলের মধ্যে দেলোয়ার আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকায় বৃদ্ধ বয়সে ঢাকায় ছেলের কাছেই থাকতেন স্বামীহারা জিন্নাতুন নেছা।

খাওয়া-দাওয়া ও চিকিৎসা থেকে শুরু করে মায়ের পুরো খরচ চালাতেন আদরের ছেলে দেলোয়ার। কিন্তু পুলিশের গুলিতে দেলোয়ার নিহত হওয়ায় এখন ভোলায় দিনমজুর অপর ছেলে আনোয়ারের কাছে থাকেন তিনি। অর্থের অভাবে কোনো মতে তিনবেলা ভাত খেতে পারলেও নিয়মিত ঔষধ জোটে না তার ।

এদিকে গত ১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বরে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হলে দেলোয়ারকে শ্যামলী সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার পেটে অস্ত্রোপাচার করা হয়। এরপরও তাকে বাঁচানো যায়নি। তিন দিন হাসপাতালের আইসিইউতে থেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন দেলোয়ার। চিকিৎসায় প্রায় চার লাখ টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়। তবু তাকে বাঁচানো যায়নি। দেলোয়ার নেই। কিন্তু পরিবারের কাঁধে তার জন্যে ব্যয় করা প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ঋণের বোঝা রয়ে গেছে। এ নিয়েই দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে নিহত দেলোয়ারের স্ত্রী লিজা বেগম।

স্ত্রী লিজা বেগম বলেন, তার স্বামী গত ১৯ আগস্ট বিকাল চারটার দিকে একটি কাজে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বরে যান। পরে সেখানকার গোলচত্বরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। এ অবস্থায় তার তলপেটে তিনটি গুলিবিদ্ধ হলে তিনি গুরুতর আহত হন। একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে একে একে তিনটি হাসপাতালে নিলেও কোথাও কেউ তাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হননি। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তার। পরে তাকে শ্যামলী সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন রাতেই তার পেটে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু ২১ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে তার মরদেহ ওইদিন সন্ধ্যার পর ভোলা সদরের গ্রামের বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

স্ত্রী লিজা আরও বলেন, তার স্বামীর হাসপাতালে চিকিৎসা, ঔষধ, অপারেশন, মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে ভোলায় আনাসহ সব মিলিয়ে প্রায় চার লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।

পুরো টাকাই ধার-দেনা করে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এখন সে টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি দেলোয়ারের ঢাকার ফার্নিচারের দোকানটি ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুুয়া ছেলে রাব্বি হাসান (১৩), ছয় বছরের মেয়ে হাসনুর ও ১৮ মাস বয়সী ছেলে হোসাইনকে নিয়ে আর্থিক সংকটে রয়েছেন।

তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামী থেকে তাদের মাত্র এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আর সরকারি বা বেসরকারি কোনো অনুদান পাননি তিনি। তাই সরকারিভাবে দেলোয়ারের জন্যে ব্যয় হওয়া ঋণ পরিশোধ ও সংসার চালানোর মতো ব্যবস্থার দাবি জানান স্বামীহারা লিজা বেগম।

ওদিকে গণমাধ্যমকর্মী আসার সাথে সাথেই আর্তচিৎকার দিয়ে দেলোয়ারের মা জিন্নাতুন নেছা বলেন, তার পাঁচ ছেলের মধ্যে দেলোয়ার ছিল চার নম্বর। প্রায় ২৬ বছর আগে দেলোয়ারের বাবা সুলতান আহমেদ মাল আরেকটি বিয়ে করেন। তাই তিনি শ্বশুরের বাড়িতে থেকে অনেক সংগ্রাম করে ছেলেদের লালন-পালন করেছেন। একটু বড় হওয়ার পর দেলোয়ার ঢাকায় গিয়ে ফার্নিচারের দোকানে কর্মচারীর কাজ নেয়। গত কয়েক বছর আগে মিরপুর-১২ নম্বরে ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় নিজেই একটি ছোটখাটো ফার্নিচারের দোকান দেয় এবং স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সেখানে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। তিনিও সেখানে ছেলের সাথেই থাকতেন। ছেলেদের মধ্যে দেলোয়ারই অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ছিল। অন্য ছেলেরা দিনমজুর, জেলে, কাঠমিস্ত্রি ও কৃষি কাজ করে কোনো মতে সংসার চালায়। তাই দেলোয়ারই তার দেখভাল করতেন। তার শরীরে নানাবিধ রোগে বাসা বেঁধেছে। ছেলে মারা যাওয়ায় ওষুধ কিনেও খেতে পারছেন না। তার আদরের ছেলেকে কেন হত্যা করল? এখন কে তাকে ঔষধ কিনে দিবে, কার কাছে থাকবেন তিনি, এসব কথা বলেই অঝোরে কেঁদে ওঠেন বৃদ্ধা জিন্নাতুন নেছা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেয়ামতের দিন যে ৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্বয়ং মহান আল্লাহ বাদী হবেন

বাম চোখ লাফালে কী হয়? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ আলেম

২৩ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

লবণ নাকি চিনি, কোনটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে?

হল ত্যাগের নির্দেশ, ঢাবিশিক্ষার্থীদের প্রতি তাসনিম জুমার যে অনুরোধ

ভূমিকম্প আতঙ্কে হল ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান ইডেন শিক্ষার্থীদের

৭ ঘণ্টা পর রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় সংঘর্ষ, আহত অনেক

ক্যাম্প ন্যুতে বার্সার রাজকীয় প্রত্যাবর্তন

জনগণকে নিয়ে এলাকার কল্যাণে কাজ করব : রবিন 

১০

দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে ৭৬ ক্লাবকে নিয়ে কোয়াবের চা-চক্রের আয়োজন

১১

ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাবি ভিসির বাসভবনের সামনে শুয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা

১২

এবার নিজেদের মাঠে নাস্তানাবুদ লিভারপুল

১৩

ভূমিকম্পে নিহতদের সম্পর্কে যা বলেছেন নবীজি (সা.)

১৪

তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে কোরআন বিতরণ 

১৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা, হল ত্যাগের নির্দেশ

১৬

সিমেন্ট কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ, ৬ শ্রমিক দগ্ধ

১৭

বাংলাদেশ সমাজকর্ম শিক্ষক সমিতির আত্মপ্রকাশ 

১৮

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও ইউনিভার্সেল মেডিকেলের স্বাস্থ্য চুক্তি

১৯

ভূমিকম্পে নিহত রাফিকে শেষ দেখা দেখলেন মুর্মূষু মা

২০
X