কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩৮ পিএম
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মশক নিধন অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ

ছবি : কালবেলা
ছবি : কালবেলা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মশক নিধন অভিযানে অসদাচরণ, হয়রানি ও জোরপূর্বক জরিমানা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সারাওয়াত মেহজাবীন নামে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে।

গত সোমবার (২১ আগস্ট) মোহাম্মদপুর এলাকার চন্দ্রিমা মডেল টাউনে সি ব্লকের ১১ নম্বর সড়কের ২১/২২ নম্বর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে এমদাদুল হক নামে এক ভুক্তভোগী মেয়র আতিকুল ইসলাম বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসে শুরু হওয়া মশক নিধন অভিযান চলছে আগস্ট মাসজুড়ে। গত সোমবারও উত্তর সিটির ১০টি অঞ্চলে একযোগে অভিযান পরিচালনা করেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। সেদিন ১০ হাজার ৫০৪টি রোড বা ড্রেন বা স্থাপনা পরিদর্শন করেন কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ৪২টিতে লার্ভা পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১২টি মামলায় জরিমানা আদায় করা হয় ১০ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরে চন্দ্রিমা মডেল টাউন এলাকা থেকে ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

অভিযোগে এমদাদুল হক বলেন, ‘বাসায় গিয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়াত মেহজাবিন বলেন, আপনার এখানে লার্ভা পাওয়া গেছে, স্বীকার করুন আপনি দোষী। আমি জানাই কিছুদিন আগে হজ থেকে এসেছি, এখনো অসুস্থ। আমি বিস্তারিত জানি না, হয়তো পরিষ্কার করা হয়নি। এটুকু বলতেই ম্যাজিস্ট্রেট তেলে বেগুনে তেঁতে উঠেন, বকাবকি করেন। বলেন, এইসব কথা অসঙ্গতিপূর্ণ এবং জোরপূর্বক আমাকে তার আনীত অভিযোগ স্বীকার করে নিতে বলেন। আমি বলি, যদি কথা বলার সুযোগ না দেন তাহলে আপনি যা ভালো মনে করেন সেটাই করেন। এতে তিনি আরও রেগে গিয়ে আমাকে অসভ্য, বেয়াদব বলে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করেন।’

তিনি বলেন, ‘এমন অসম্মানজনক কর্মকাণ্ডে আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ি। ৭০ বছর বয়সে ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত। জরিমানার টাকার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আমার বাসার দারোয়ানকে নিয়ে যান এবং তিন লাখ টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে বলেন। তাকে ছাড়াতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গেলে আমার স্ত্রী এবং ব্যবসায়িক অংশীদারকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিয়ে জরিমানার টাকা পরিশোধের চাপ দেওয়া হয়। পরে আমরা তিন লাখ টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনি।’

এমদাদুল হকের দাবি, ‘১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ২৯১ ধারা বলে, নিষেধাজ্ঞার পরেও গণউপদ্রুব চালিয়ে যাওয়া অথচ আমাদের এই ধরনের কোনো নির্দেশনা বা নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই আইনের প্রয়োগে জরিমানা আদায় করা হয়েছে যা আইনের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। ধারা ২৬৯ অনুসারে বলা হয়, অবহেলামূলক কাজ যার মাধ্যমে জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রমণ বিস্তার করার আশংকা রয়েছে, উক্ত ধারার আলোকে আমার অধীনস্থ আঙিনায় এই ধরনের কোনো রোগ সংক্রমণের কোনো আশঙ্কা নেই। যে দুটি ধারায় জরিমানা দেওয়া হয়েছে তার কোনোটিই আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আদায়কৃত জরিমানা আমার আইনি অধিকার খণ্ডনের শামিল।’

এমদাদুল হকের ছেলে জিয়া হক বলেন, ‘বাসায় কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। তাই ভেতরে নির্মাণাধীন সরঞ্জামসহ আশপাশে একটু পানি জমাট ছিল। সেগুলো বৃষ্টির পানি। এমন না যে ৮-১০ দিন ধরে জমে আছে। এ পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কোনো নাগরিক সুবিধা নেই। বাসার সামনে সড়ক ও ড্রেনেজ সুবিধা নেই। মশার ওষুধও ঠিকমতো দেয় না। অথচ লাখ লাখ টাকা জরিমানা করছে।’

নাছরুম জাহান নামে এক ভবন মালিক কালবেলাকে বলেন, ‘আমাকে জানানো হয় নির্মাণাধীন ভবনে লার্ভা পাওয়ার অভিযোগে আপনাকে আড়াই লাখ টাকা দিতে হবে। নাহলে তিন মাস জেল। এত টাকা জরিমানা করছে তারা, আবার সময়ও বেঁধে দিচ্ছে। আমরা তো এত টাকা নিয়ে বসে নেই। এর মধ্যে আমার ইঞ্জিনিয়ারকে কাউন্সিলর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। জরিমানার টাকা দিয়ে পরে তাকে ছাড়িয়ে এনেছি।’

এ বিষয়ে জানতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাওয়াত মেহজাবীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, চারদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। সে কারণেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের আওতাধীন এলাকায় বাসা-বাড়িতে ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় অভিযান চালাচ্ছে এবং সচেতন করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে চন্দ্রিমা মডেল টাউনে ২১/২২ নম্বর বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নির্মাণাধীন ভবনটির সামনে জমাট বাঁধা পানিতে মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এমনকি ভবনের নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রীতেও মর্শার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা প্রথম থেকেই অসহযোগিতা করে আসছিল এবং জরিমানা পরিশোধে অপরাগতা প্রকাশ করছিল।

এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা কালবেলাকে বলেন, এমন একটি অভিযোগ এসেছে আমি শুনেছি। বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ এটা একটি বিচারিক আদেশ। তিনি তার দায়িত্ব পালনের সময় সম্পূর্ণ স্বাধীন। তিনি কোন প্রেক্ষাপটে কি আদেশ দিয়েছেন এটা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট ভালো বলতে পারবেন। এটা তার সিনিয়র কোর্ট আছে, ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে কথা বলতে হলে আপিল করা যেতে পারে। দায়িত্ব পালনকালে তিনি কি করেছেন সেটা তার ঊর্ধ্বতন সিনিয়র কোর্ট বা সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফাইনালে মেসি-রোনালদোর রেকর্ড কেমন?

কক্সবাজারে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ফ্লাইট চালুর আশা

পদ্মা ব্যাংকের ১২৯তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত

নতুন ভূমিকায় এবার দেখা মিলবে সৌরভ গাঙ্গুলির

কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া

বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করল যুক্তরাষ্ট্র

খুলনায় পিকআপ-ইজিবাইক সংঘর্ষে নিহত ২ 

বিপাকে পড়েছেন শ্রদ্ধা কাপুর

বিয়ের আগে মা হওয়া নিয়ে গর্ববোধ করেন নেহা ধুপিয়া

১০

পেনাল্টি মিসের দোষ রেফারির ঘাড়ে চাপালেন ম্যানইউ অধিনায়ক

১১

৪ ইভেন্টে ৩ রেকর্ডে যে বার্তা দিলেন রিংকি

১২

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন অন্যতম প্রতিভাবান ক্রিকেটার

১৩

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ নাহিদের

১৪

গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে যে ভয়ের কথা জানালেন তৌহিদ আফ্রিদি

১৫

সুনামগঞ্জে বালু-পাথর লুট ঠেকাতে বিজিবির অভিযান

১৬

টি-টোয়েন্টিতে অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়ে যা বললেন সাকিব

১৭

ইসির শুনানিতে হট্টগোল / রুমিন ফারহানার সমর্থকদের মহাসড়ক অবরোধ, এনসিপির বিক্ষোভ 

১৮

কারাগারে বিক্রমাসিংহে, মুখ খুললেন সাবেক তিন প্রেসিডেন্ট

১৯

গোল্ডেন হারভেস্টে বড় নিয়োগ

২০
X