কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনে ঐতিহ্যগতভাবে চলে আসা কোরবানি দেওয়ার প্রথা সম্প্রতি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন নবনিযুক্ত ডেপুটি হাইকমিশনার শাবাব বিন আহমেদ। নতুন ডেপুটি হাইকমিশনারের এই পদক্ষেপে কলকাতা মিশনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে জরুরি ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে এমনটা জানা যায় মিশন সূত্রে।
এক সূত্র কালবেলাকে নিশ্চিত করে, ধর্মীয় উৎসব (ঈদুল আযহা) ঘিরে ডেপুটি হাইকমিশনারের এমন সিদ্ধান্তে অনেকটাই বিব্রত হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে তার এই বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।
জানা যায়, কলকাতা মিশনে যোগদানের আগেই কোরবানি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন ডেপুটি হাইকমিশনার শাবাব বিন আহমেদ। যদিও কলকাতা মিশনে কোরবানি করার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে কলকাতা মিশনে কোরবানি হয়ে আসছে। প্রতি বছরই পাঁচ থেকে সাতটি গরু এবং ছাগল কোরবানি করা হয়। এই কোরবানির গোশতের একটি বড় অংশ বিভিন্ন এতিমখানায় পাঠানো হয়।
তা ছাড়া মিশনের চারপাশে বসবাসকারী মানুষের প্রায় ৯০ ভাগই মুসলিম। ফলে তার এমন বক্তব্যকে ভালোভাবে নিচ্ছে না মিশনের কর্মকর্তারা এবং অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এ বিষয়ে তার জবাবদিহি করতে হতে পারে জানিয়ে একই সূত্র বলছে, তার এমন বক্তব্যে যেহেতু কলকাতা মিশনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারও বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখছে ফলে, এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইতে তাকে ঢাকায় তলবও করা হতে পারে।
নতুন মিশনপ্রধান এখন হেগে মিনিস্টার (রাজনৈতিক) হিসেবে কর্মরত আছেন। গত জানুয়ারি মাসে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে তার কলকাতায় পোস্টিং অর্ডার হয়। আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তার দায়িত্ব নেওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কলকাতার নবনিযুক্ত ডেপুটি হাইকমিশনার যখন এমন নির্দেশ দেন তখন দূতাবাস কর্মকর্তারা তাকে মিশনের কোরবানির বিষয়টি নিয়ে এর স্পর্শকাতরতার কথা বারবার তুলে ধরে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে অপারগতা জানান। কিন্তু তিনি কোনো কিছুতেই কর্ণপাত করেননি। একপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নতুন মিশনপ্রধানকে প্রয়োজনে কোরবানির শেষে দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে মিশনের কর্মকর্তাদের গত সপ্তাহে সাফ জানিয়ে দেন, তিনি ঈদের আগেই দায়িত্ব নেবেন এবং কোরবানির সব ধরনের প্রস্তুতি বন্ধ করতে বলেন। আর এতেই সবাই ক্ষিপ্ত হোন।
তবে এ নিয়ে শাবাব বিন আহমেদ জানিয়েছেন, কলকাতা ছাড়া আর কোনো মিশনে কোরবানি হয় না। আমি এর আগে আরও পাঁচটি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছি। কোথাও কোরবানি করা হয় না। আমরা কূটনীতিকরা দেশের জন্য কাজ করি। আমরা যেখানে কাজ করব, সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতির কথা আমাদের মাথায় রাখা দরকার।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাগতিক দেশের রীতিনীতি মেনে চলা উচিত। কূটনীতিক হিসেবে হোস্ট কান্ট্রির আস্থা অর্জন করা জরুরি। আমাদের কলকাতা মিশনের নিরাপত্তায় ২৫ জনের মতো নিরাপত্তাকর্মী থাকে। তারা তো গরুকে পূজা করে। একবার ভেবে দেখেছেন, তারা যাকে পূজা করে, যখন আমরা সেটাকে জবাই করি, তাদের মনের অবস্থা কী হয়? এগুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
মন্তব্য করুন