বাংলাদেশে ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতির বিরুদ্ধে লড়াই আরও শক্তিশালী করতে এক প্রেরণামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৮ মে) গুলশানের লেকশোর হাইটসে টেকনোসার্ভ ইনক. ও মিলার্স ফর নিউট্রিশনের যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।
“বাংলাদেশের বাণিজ্যিক বাজারে ফোর্টিফাইড গমের আটা প্রবর্তনের প্রযুক্তি ও উপকারিতা” শীর্ষক কর্মশালায় অংশ নেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মিল মালিক, খাদ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞসহ ৪৬ জন প্রতিনিধি। কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিল- গমের আটায় পুষ্টি উপাদান সংযোজনের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা তুলে ধরা। বাংলাদেশে ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি, যা বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মাঝে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, তা দূর করতে এ লক্ষ্য ঠিক করা হয়। এতে 'পুষ্টির জন্য প্রযুক্তি' নিয়ে আলোচনা করেন অংশগ্রহণকারীরা। তারা বাণিজ্যিক বাজারে ফোর্টিফাইড আটার সম্ভাবনা ও প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে কথা বলেন।
টেকনোসার্ভের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. গুলজার আহম্মেদ উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, 'মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ঘাটতির কারণে দেশে লাখো মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। প্রযুক্তি ও সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকলে, এই সমস্যা সহজেই সমাধানযোগ্য।' তিনি সরকারি, বেসরকারি এবং উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের ওপর জোর দেন।
প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জামাল হোসেন। তিনি বলেন, 'ফোর্টিফাইড গমের আটা শুধু পুষ্টির নিশ্চয়তা দেয় না, এটি একটি টেকসই জনস্বাস্থ্য কৌশল।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন সময় এসেছে এটিকে বাণিজ্যিকভাবে প্রসারিত করার, কারণ জনগণ এখন স্বাস্থ্য সচেতনতার দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছে।
গমের ফোর্টিফিকেশন সফলভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) উপপরিচালক এস. এম. আবু সাঈদ। তিনি জানান, ফোর্টিফাইড আটার মান নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মনীতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব।
টেকনোসার্ভের সিনিয়র ফুড ফোর্টিফিকেশন স্পেশালিস্ট মো. নাঈম জোবায়ের তার মূল প্রবন্ধে বলেন, 'গমের আটায় পুষ্টি উপাদান সংযোজন একটি সহজ, ব্যয়সাশ্রয়ী এবং টেকসই সমাধান। এটি কেবল স্বাস্থ্য উন্নয়ন নয়, অর্থনীতিতেও দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।' তিনি প্রযুক্তিগত দিক, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং উদ্ভাবনের জায়গাগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন।
এসিআই ফুডস্ লিমিটেডের চিফ বিজনেস অফিসার ও মিলার্স ফর নিউট্রিশনের গ্লোবাল মিলারস অ্যাডভাইজরি গ্রুপের সদস্য ফারিয়া ইয়াসমিন বলেন, 'পুষ্টি নিশ্চিত করা শুধু দায়িত্ব নয়—এটি একটি সামাজিক অঙ্গীকার।'
সমাপ্তি বক্তব্যে মো. গুলজার আহম্মেদ অংশগ্রহণকারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, 'এই কর্মশালা একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে যেখানে প্রযুক্তি, নীতি ও প্রতিশ্রুতি একসাথে হয়ে দেশের পুষ্টি ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করবে। কর্মশালাটি ছিল একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। যা বাংলাদেশে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক খাদ্য ফোর্টিফিকেশন কর্মসূচির প্রসারে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
কর্মশালায় একটি মুক্ত আলোচনায় মিল মালিক, খাদ্য শিল্প প্রতিনিধি ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকারীরা সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আলোচনায় অংশ নেন 'বিএএসএফ ও ম্যুলেন শেমি'-এর প্রতিনিধি এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশনের (গেইন) মতো উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন