ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে আরও ১ হাজার ৩৩৬টি মাঠ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষায় নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী ঢাকা মহাগরীতে ৭৯৫ টি, চট্টগ্রামে ৫৪১ এবং রাজশাহীতে ৩৭টি খেলার মাঠের ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় খুলনা মহানগরীতে ৬৫ শতাংশ, সিলেটে ৪০ শতাংশ এবং বরিশাল মহানগরীতে ৪৫ শতাংশ খেলার মাঠের ঘাটতি রয়েছে।
আজ বুধবার (৩০ আগস্ট) ‘ঢাকা মহানগরীর খেলার মাঠ-পার্ক-গণপরিসর সুবিধাদির এলাকাভিত্তিক সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে টেকসই পরিকল্পনা’ শীর্ষক নগর সংলাপের মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরেন আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি); সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এবং নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম বাংলাদেশ অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক মো. মুশতাক হোসেন, আইপিডির পরিচালক পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম, তেঁতুলতলা মাঠ আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক অমিতোষ পাল এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল খান প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী ঘনবসতিপূর্ণ নগর এলাকায় প্রতি তিন থেকে ৫ হাজার মানুষের জন্য একটি করে শিশুদের (৩-৬ বছর) খেলার মাঠ, কিশোরদের জন্য (৭-১৫ বছর) প্লে-গ্রাউণ্ড ও বড়দের জন্য (১৫ ঊর্ধ্ব বয়সী) প্লে-ফিল্ড এর সুবিধা থাকতে হয়। পরিকল্পনার সূচক সম্পর্কিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত টাইম সেন্ডার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য ০.৫১ একর আয়তনের প্লে লট, ১.৫ - ৩ একরের প্লে-গ্রাউন্ড, ১.৫ - ১৫ একর আয়তনের প্রে-ফিল্ড থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনায় এই তিন বয়স ক্যাটাগরির।শিশু-কিশোরদের জন্য তিন ধরনের খেলার মাঠের পরিকল্পনা করবার জন্য তেমন কোন পরিকল্পনা উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি, অথচ বিভিন্ন বয়স শ্রেণীর জন্য বিভিন্ন ধরনেরে খেলার মাঠ তৈরি করা পরিকল্পনার বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) তথ্য দিয়ে বলেন, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ১ ঘন্টা করে খেলাধূলা ও শারীরিক সক্রিয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা থাকা উচিত। মাঠের ঘাটতির ফলে এইসকল নগর এলাকার অধিকাংশ শিশু-কিশোরেরা খেলার মাঠ না থাকবার কারণে খেলাধূলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে স্বাভাবিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।খেলার মাঠের মতই নগর এলাকায় তিন ধরনেরে পার্ক এর পরিকল্পনা করতে হয়, যথা: নেইবারহুড পার্ক, কমিউনিটি লেভেল পার্ক, আরবান বা সিটি পার্ক। আমাদের দেশের নগর পরিকল্পনায় এই ধরনের শ্রেণীভিত্তিক পার্ক পরিকল্পনা দেখা যায় না। ফলে বিশাল জনসংখ্যার এই ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন শ্রেণীর পার্ক ও গণপরিসরের তীব্র সংকট আছে।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় সকলের জন্য প্রবেশাধিকার আছে এমন মাঠ আছে মাত্র ৪২টি এবং ঢাকা শহরের মাত্র ১৬ ভাগ এলাকার মানুষ খেলার মাঠের পরিসেবার মধ্যে বসবাস করেন এবং অবশিষ্ট ৮৪ ভাগ এলাকার মানুষ খেলার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ওয়ার্ড রয়েছে ১২৯টি। এর মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই এই তথ্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) উল্লেখ রয়েছে।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, আমাদের মানসিক বৃদ্ধি ও শারিরীক বৃদ্ধির জন্য দরকার খেলার মাঠ, পার্ক, উদ্যান। কিন্তু আমাদের উন্নয়ন দর্শনে সেটি নেই। যতবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে ততবার উত্তরা, গুলশান এর ডিজাইন পরিবর্তন হয়েছে। যখন কোনও আবাসিক ভবনের অনুমোদন নেওয়া হয় তখন খেলার মাঠ, পার্ক দেখিয়ে অনুমোদন নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে তা আর বাস্তবায়ন হয় না। আবার যেখানে মাঠ পার্ক আছে সেগুলোর অনেকটিতেও শিশুরা খেলতে যেতে পারে না।
তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরগন যদি পরিকল্পনা করে ৫ বছরে একটি পার্ক বা খেলার মাঠ তৈরি করে, তাহলে ৫ বছরে ১২৯ টি নতুন পার্ক বা খেলার মাঠ গড়ে তোলা সম্ভব।
মন্তব্য করুন