আদালতে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে ২০১৮ সালের প্রহসনের নির্বাচন বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়। জবাবে নুরুল হুদা জানান, ঢাকায় বসে গ্রামাঞ্চলের নির্বাচনের খবর রাখার সুযোগ ছিল না তার।
সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আদালতে নুরুল হুদাকে বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘আপনার নির্বাচনে (২০১৮ সালের নির্বাচনে) সব ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন?’
জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘৫টা লোক নিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন। আর নির্বাচনের জন্য আরও ১৫ লাখ লোক নিয়োজিত থাকেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার, পুলিশ, সেনাবাহিনী সবাই থাকে। তাদের সবার ওপর নির্বাচনের দায়িত্ব থাকে। ঢাকায় বসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাচনে কী হচ্ছে, সবটা জানার সুযোগ নেই।’
তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি শপথ নিয়ে এ কথা বলতে পারেন না।’
বিচারক আবার প্রশ্ন করেন, ‘যারা ভোট কারচুপি করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন?’ জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এরপর হাইকোর্ট ব্যবস্থা নেন।’
এর আগে, বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে নুরুল হুদাকে হাজতখানা থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এসময় নুরুল হুদা মাথার হেলমেট খুলে ফেলেন, বুক থেকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটসহ হাতের হাতকড়াও খোলা হয়। পরে বিকেল ৪ টা ১৭ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসেন। এসময় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার আসামির ১০ দিনের আবেদন করেন। আদালত চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, রোববার (২২ জুন) সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে নুরুল হুদাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এদিন স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরা নুরুল হুদাকে গলায় জুতার মালা পরান জনতা। জুতা দিয়ে মুখে আঘাত করতেও দেখা যায়।
এরপর বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলায় নুরুল হুদা ছাড়াও সাবেক ৩ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্বেও গ্রেপ্তার আসামি কে এম নুরুল হুদাসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্পূর্ণভাবে জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন। সেই নির্বাচনে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মাধ্যমে দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বক্স ভর্তি করা হয়। এরপর ৩০ ডিসেম্বর সকালে কিছু ভোট আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডারদের মাধ্যমে গ্রহণ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। বিএনপির ৬ জন সংসদ সদস্যকে বিজয়ী ঘোষণা করে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এভাবেই সম্পন্ন হয় নুরুল হুদার অধীনে।
মন্তব্য করুন