বাসস
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

গুমে নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতরকার মতানৈক্য ও বিদেশি সংযোগ পেয়েছে কমিশন

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

গুম-সংক্রান্ত ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিশন তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ ধরনের ঘটনার পেছনে শুধু দেশীয় নিরাপত্তা বাহিনীই নয়, এর সঙ্গে বিদেশি অংশীদারদের ভূমিকা এবং বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দ্বিধা ও মতবিরোধও রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের একটি অংশ গুমসহ নানা বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, যার ফলে অনেককে পেশাগত ও ব্যক্তিগতভাবে ভুগতে হয়েছে।

কমিশন বলেছে, গুম বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার ফল না; বরং এটি এমন একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা। যেখানে আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতাও ছিল, বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার নামে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সম্পৃক্ততা।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, গুম-সংক্রান্ত বিষয়ে নিরপেক্ষ মত দেওয়ার কারণে তাকে সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। নতুন পদায়নের আগেই তার সম্পর্কে সতর্কবার্তা ছড়ানো হতো, এমনকি তার পরিবারের ওপর নজরদারি চলত।

এক যুবক কমিশনকে জানান, তার ভাই একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করতেন। তাকে রাজনৈতিক ‘বিরোধীদের’ তালিকা করতে বলা হয়। পরে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে, যা জানার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তার ভাই। শেষ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

এক সৈনিক জানান, তাকে একটি গোপন বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে বন্দিদের প্রতি ছিল চরম নিষ্ঠুরতা। তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয় যেন স্বাভাবিক ব্যবহার না করা হয়; বরং বন্দিদের কষ্ট দেওয়ার নির্দেশ মেনে চলা হয়। এমনকি বন্দিদের সামনে কথা বলাও নিরুৎসাহিত করা হতো। পরিবর্তে ইশারা ও শিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলা হতো, যা অনেক ভুক্তভোগীর বর্ণনায়ও উঠে এসেছে।

তবে প্রতিবেদন জানানো হয়, ওই সৈনিক একপর্যায়ে প্রতিরোধের ছোটখাটো চেষ্টা করতেন। যেমন নিজের খাবার বন্দিদের দিয়ে দিতেন। এক বন্দি কমিশনকে সরাসরি জানান, ওই সৈনিকের দেওয়া খাবারে তিনি বেঁচে ছিলেন।

আরেকজন র‌্যাব গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, তাকে একজন দীর্ঘদিনের বন্দিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু তিনি তা অমান্য করেন এবং ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্বে থেকে তার অবস্থান ধরে রাখেন।

কমিশনের ভাষায়, সব সময়ই যে অবাধ্যতার ফলাফল তাৎক্ষণিক হয়, তা নয়। কেউ কেউ তাদের অবস্থান জানানোর পরও টিকে ছিলেন। যেমন দুজন র‌্যাব সদস্য র‌্যাব গোয়েন্দাপ্রধানকে নিজ হাতে লেখা চিঠিতে জানান যে তারা বেআইনি কোনো আদেশ পালন করবেন না।

এক চিঠিতে লেখা ছিল, ‘যদি কোনো অভিযান আইনবহির্ভূত বা আইনবহির্ভূত গুলি চালানোর উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে আমি তাতে অংশ নিতে পারব না।’

প্রতিবেদন জানানো হয়, বিগত সরকারের পতনের পর এ ধরনের কয়েকটি নোট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকেও পাঠানো হয়েছিল, যা পরে গণভবন থেকে উদ্ধার হয়।

তবু কমিশনের ভাষায়, ‘এরপরও গুমের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যেখানে ট্রেনলাইন কিংবা চলন্ত যানবাহনের নিচে ফেলে লাশ গুম করা হয়েছে।’

প্রতিবেদন বলছে, ‘গুমের মতো অপরাধকে অনেকাংশে অঘোষিতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল এবং যারা এসব করেছিল, তারা প্রকৃত অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হননি।’

কমিশনের প্রতিবেদন জানায়, আন্তর্জাতিক সংযোগও এই ঘটনার পেছনে কার্যকর ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও, আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পশ্চিমা সহযোগিতার সুবিধাও পেয়েছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয় একজন ভুক্তভোগী কমিশনকে জানান, তাকে ডিবির হেফাজতে দুজন আমেরিকান নাগরিক জেরা করেছিলেন। যদিও তারা সরাসরি নির্যাতনে অংশ নেয়নি, তথাপি তাদের উপস্থিতিই এই বেআইনি আটক ব্যবস্থাকে বৈধতা দেয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসপাতালে প্রবাসীর মরদেহ ফেলে পালাল স্ত্রী

জবির ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন’ বিভাগের নাম পরিবর্তন

ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করল কাতার

প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের জানাজায় যুবলীগ নেতা

জবির ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’-এর নাম পরিবর্তন

যুদ্ধবিরতি নিয়ে এবার মুখ খুলল চীন

সিগারেটের প্যাকেটে স্ত্রীকে ‘তুমি আমার প্রাণের প্রিয়া’ লাভ লেটার দিলেন নোবেল

পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে সরে আসতে পারে ইরান

পাটগ্রাম সীমান্তে ৭ বাংলাদেশিকে পুশইন

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন / ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার ইরানের

১০

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

১১

সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা

১২

ইরানে অজানা গোষ্ঠীর হামলায় নিহত ৯

১৩

স্বাধীন দেশেও আমরা লজ্জিত : সাখাওয়াত হোসেন

১৪

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই তেহরানে ব্যাপক হামলার নির্দেশ

১৫

কাতারে হামলা ও রুদ্ধশ্বাস, ২৪ ঘণ্টায় বড় ১০ খবর

১৬

অস্ত্রের মুখে স্বর্ণালংকার লুট, ডাকাতের গুলিতে গৃহকর্তা নিহত

১৭

যশোরে ২৪ মামলার আসামি ডলার গ্রেপ্তার

১৮

মুক্তি পেল আহাদের মৌলিক গান

১৯

গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেল রিমার্ক / বাংলাদেশের কসমেটিকস বিশ্ববাজারেও সমাদৃত : শ্রম উপদেষ্টা

২০
X