কর্মীদের অসন্তোষের মুখে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিনিয়র কেবিন ক্রু (ফ্লাইট পার্সার) হাফসা আহমেদ শিল্পীকে চিফ পার্সার (ব্রিফিং) পদে দায়িত্ব দিয়ে একদিনের মধ্যেই তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার (১১ আগস্ট) তাকে চিফ পার্সার (লাইন ক্রু) থেকে বদলি করে চিফ পার্সার (ব্রিফিং) পদে দায়িত্ব দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তবে, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ফের সেই চিঠি প্রত্যাহার করে তাকে আগের পদে ফিরিয়ে নেওয়ার চিঠি জারি করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাহক সেবা পরিদপ্তরের অধীনে চিফ পার্সার (ব্রিফিং) পদটি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সিনিয়র কেবিন ক্রুদের মধ্য থেকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তাকে ফ্লাইটে দায়িত্বও পালন করতে হয় না।
গ্রাহক সেবা পরিদপ্তর সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই সিনিয়র অন্তত দুজনকে ডিঙ্গিয়ে ওই পদে হাফসাকে বসানোর চেষ্টা চলে আসছিল। তিনি কেবিন ক্রু ইউনিয়নের সহসভাপতি হওয়ায় পদ পেতে প্রভাবও বিস্তার করছিলেন। কয়েক মাস আগে তাকে চিফ পার্সার ব্রিফিং পদে বসানোর চিঠি ফাঁস হয়ে গেলে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এরপর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হস্তক্ষেপে ওই উদ্যোগ তখন বাতিল হয়। তবে তিনি বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মালয়েশিয়ায় সফরে থাকার মধ্যেই ফের হাফসাকে চিফ পার্সারের (ব্রিফিং) পদে বসানোর চিঠি ইস্যু হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে তড়িঘড়ি করে সে চিঠি বাতিল করে তাকে আগের পদে ফেরানো হয়।
সোমবার (১১ আগস্ট) বিমানের গ্রাহক সেবা পরিদপ্তরের মহাব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে হাফসা আহমেদ শিল্পীকে চিফ পার্সার (লাইন ক্রু) পদ থেকে চিফ পার্সার (ব্রিফিং) পদে ‘প্লেসমেন্ট প্রদান’ করা হয়। তবে গতকাল একই কর্মকর্তার স্বাক্ষরে জারি করা চিঠিতে বলা হয়, হাফসা আহমেদ শিল্পীর অনুকূলে জারিকৃত প্লেসমেন্ট আদেশ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বাতিল করা হলো।
একদিনের ব্যবধানে আদেশ বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘এ ধরনের চিঠির কথা তার মনে নেই।’ সোমবার (১১ আগস্ট) ও মঙ্গলবারই (১২ আগস্ট) তিনি স্বাক্ষর করেছেন জানালে বিমানের এই কর্মকর্তা বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
লাইন ক্রুর সংকটের মধ্যেও দুজনকে ডিঙ্গিয়ে একজন লাইন ক্রুকে চিফ পার্সার (বিফ্রিং) পদে বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানে গ্রাহক সেবা পরিদপ্তরের পরিচালক মো. রাশেদুল করিম এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বিষয়টি নিয়ে জনসংযোগ বিভাগে কথা বলার পরামর্শ দেন।
বিমানের গ্রাহক সেবা পরিদপ্তরের একাধিক কর্মী নাম প্রকাশ না করে কালবেলাকে বলেন, হাফসা আহমেদ শিল্পী বিগত সরকারের আমলে সব ভিভিআইপি ফ্লাইটে দায়িত্ব পালন করেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের আগে স্পেন ও ব্রাজিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যে সফর ছিল, সেই দুটি ফ্লাইটেও চিফ পার্সারের দায়িত্বে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন হাফসা। কিন্তু সরকার পতনের পর তা বাতিল হয়। তৎকালীন সরকারের এমন ‘পরীক্ষিত’ কর্মীকেই ফের বিমানের লোভনীয় পদে বসানোর চেষ্টায় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, হাফসার বোনের স্বামী আবু জাফর ছিলেন আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত। গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে দেশটিতে প্রবাসীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। সেখানে তা দমাতে ভূমিকা রাখার অভিযোগ ছিল ওই রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। হাফসার আরেক বোনের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম জুলাই আন্দোলনের সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব ছিলেন। ওই সময়ে হাফসা দায়িত্ব পালনে নানা অনিয়ম করলেও প্রভাবশালী স্বজনদের কারণে রক্ষা পান। এখন আবার তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর চেষ্টা শুরু হওয়ায় বিমানের কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
মন্তব্য করুন