ঢাকার আকাশে টার্বুলেন্সের শিকার হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। প্রায় ৯ সেকেন্ড ধরে তীব্র টার্বুলেন্সের ঝাঁকুনিতে পড়ে এক কেবিন ক্রুর হাত ভেঙে গেছে। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল, তবে তারা সবাই নিরাপদ ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার কিছু সময় পর বিমানের বিজি ১২৮ ফ্লাইটে এই ঘটনা ঘটে। বোয়িং ৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজটি দুবাই থেকে চট্টগ্রামের হয়ে ঢাকায় ফিরছিল।
ওই ফ্লাইটের যাত্রী ও বিমানকর্মী সূত্রে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণের পর দুর্ঘটনায় শিকার কেবিন ক্রু শাবানা আজমী মিথিলাকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। এক্স-রে পরীক্ষায় দেখা গেছে, তার বাঁ হাতের কনুইয়ের ওপরের (বাহু) হাড় ভেঙে অনেকটা আলাদা হয়ে গেছে।
মিথিলার একজন সহকর্মী জানিয়েছেন, মিথিলা তখন যাত্রী সেবা শেষ করে উড়োজাহাজের পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর অপর সহকর্মী নিজ আসনে বসে ছিলেন। ঠিক তখনই বিমানটি টার্বুলেন্সের শিকার হয়। ঝাঁকুনির তীব্রতায় মিথিলা ভারসাম্য হারিয়ে উড়োজাহাজের গ্যালির ফ্লোরে পড়ে যান এবং অচেতন হয়ে যান।
ওই ফ্লাইটের একজন যাত্রী জানিয়েছেন, ঝাঁকুনির সময় যাত্রীদের মধ্যে চিৎকার শুরু হয়। তবে প্রায় সবার সিটবেল্ট বাঁধা থাকায় বড় ধরনের আহত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিছুক্ষণ পর ককপিট থেকে ঘোষণা আসে, ফ্লাইটে কোনো চিকিৎসক রয়েছেন কিনা। ঘোষণার পর একজন প্যারামেডিক্স চিকিৎসক নিজেকে পরিচয় দেন এবং অচেতন কেবিন ক্রুর প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন। ততক্ষণে ফ্লাইটটি নিরাপদে ঢাকায় অবতরণ করে।
মিথিলার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ফ্লাইটটি অবতরণের পর জরুরি চিকিৎসার জন্য বিমানের মেডিকেল সেন্টারের কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। শুক্রবার হওয়ায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির মেডিকেল সেন্টারও বন্ধ ছিল! বিমানের মোটরপার্টস শাখার চালক না পাওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স সেবাও মেলেনি। পরে একজন নারী সহকর্মী মিথিলাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে অন্য কেবিন ক্রুদের মধ্যে।
মাঝেমধ্যে উড়োজাহাজ টার্বুলেন্সের শিকার হওয়ার খবর মেলে। মাঝেমধ্যে ঝাঁকুনির খবর মিললেও স্মরণকালে এবারই প্রথম ঢাকার আকাশে বড় ধরনের এ টার্বুলেন্স দুর্ঘটনায় পড়ল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি। এর আগে গত বছরের মে মাসে মাঝ আকাশে মারাত্মক টার্বুলেন্সের শিকার হয়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের এক যাত্রীর মৃত্যু ও বেশ কয়েকজন আহত হন। তখন বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়।
এভিয়েশনের ভাষায় দুই বিপরীতমুখী বাতাসের সংঘর্ষের কারণে তৈরি হওয়া বায়ুর একধরনের অনিয়মিত প্রবাহকে টার্বুলেন্স বলা হয়। বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহের এ ধাক্কাধাক্কির মধ্যে উড়োজাহাজ এসে পড়লেই এক বা একাধিক মারাত্মক ঝাঁকুনি লাগতে পারে। উড়োজাহাজের গতিবিধি ও উচ্চতায় আকস্মিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এক ধাক্কায় উড়োজাহাজ কয়েক হাজার ফুট নিচে নেমে যেতে পারে। বাতাসের চাপ খুব বেশি থাকলেও উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। কোনো সংকেত ছাড়াই এমনটা ঘটার কারণে সাধারণত পাইলটদের কিছু করারও থাকে না। এ টার্বুলেন্সের সময় যাত্রীদের সিটবেল্ট না থাকলে হতাহতের মতো ঘটনা ঘটে।
মন্তব্য করুন