গত অর্থবছরের ধারবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। সদ্য শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এক মাস পেরিয়ে গেলেও সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে বরাদ্দের ১ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ থাকলেও খরচের খাতা খুলতে পারেনি ১২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। বাকিরা খাতা খুললেও নাম মাত্র খরচ করতে পেরেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সব কটি মন্ত্রণালয় বিভাগের জন্য চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা, যা শতাংশের হিসাবে মাত্র শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বাস্তবায়ন হার সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, এর আগে শুধু ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাস্তবায়ন হার চলতি অর্থবছরের থেকে কম ছিল। ওই অর্থবছর দুটিতে বাস্তবায়নের হার ছিল ৫৬ ও ৫৮ শতাংশ। এ ছাড়া বাকি অর্থবছরগুলোর বেশির ভাগের বাস্তবায়ন হার ১ শতাংশের ওপর ছিল।
খরচের হিসাবেও আগের অর্থবছরগুলো এগিয়ে ছিল। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৬৪৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খরচ হয় ২ হাজার ৯২২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি ৯ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৫৫ কোটি ৫ লাখ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে খরচ করেছিল ২ হাজার ৬৯৩ কোটি ৯ লাখ টাকা।
এদিকে অর্থবছরের এক মাস পেরিয়ে গেলেও এক টাকাও খরচ করতে পারেনি ১২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। অথচ এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য চলতি বছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ১৭ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। খরচের খাতা খুলতে না পারা মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে– পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইএমইডি, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সংসদবিষয়ক সচিবালয়।
এ ছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে ১০ হাজার ৭৭১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সেখান থেকে কোনো খরচ করা হয়নি।
খরচের খাতা খুললেও নামমাত্র খরচ করতে পেরেছে ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলো হলো– নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ (উন্নয়ন বরাদ্দ)। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বাস্তবায়ন হার বরাদ্দের মাত্র শূন্য দশমিক ১০ শতাংশের নিচে।
একই সময়ে সর্বোচ্চ বরাদ্দের অর্থ খরচ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টি তাদের জন্য মোট বরাদ্দের ২৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছে, যা শতাংশের হিসেবে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থ বাস্তবায়নের হারে দ্বিতীয় অবস্থান রয়েছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। বিভাগটির বাস্তবায়ন হার ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ, ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
এই মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দ ১৯৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকার। এর মধ্যে ব্যয় করেছে ৭ কোটি টাকা; যা শতাংশের হিসাবে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ ছাড়া পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। এই বিভাগটি ৩ হাজার ৮০ কোটির টাকার মধ্যে ১০৬ কোটি টাকা খরচ করেছে, যা শতাংশের হিসেবে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়ার বিষয়ে গত রোববার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, গত অর্থবছরজুড়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল সবচেয়ে কম। চলতি বছরের শুরুতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ায় জানুয়ারি থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি আবারও শ্লথ হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের হার বাড়ানোর জন্য বিশেষ নজরদারি চলছে।
মন্তব্য করুন