পাচারকৃত অর্থসম্পদ ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। দলটির প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেছেন, সরকার চায় না অর্থ পাচারকারীর বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ হোক। লুটপাটের কারণেই দেশে গণতন্ত্র নেই। তাই আমরা চাই, পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। বিদেশে গিয়ে পরিশ্রম করে বৈধ পথে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠায়। অথচ অবৈধ পথে এর চেয়ে বেশি টাকা পাচার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
হাসনাত কাইয়ূম বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বেশ জোরেশোরে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসনসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ব্যাপকভাবে উদ্বেগ ও তৎপরতা দেখিয়েছেন। সেই সকল বন্ধুরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এবং দেশের জনগণকে বলতে চাই- বাংলাদেশে যে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে পারে না, মানবাধিকার চাইলেই কেড়ে নেওয়া যায়, আইনের শাসনের নামে আইন দিয়েই জুলুম করা হয়- সেসবের যতগুলো কারণ আছে তারমধ্যে প্রধানতম কারণ হচ্ছে- রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে অবাধ লুটপাট ও পাচারের সুযোগ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারা দুনিয়ায় গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে- ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, অফ দ্য পিপল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এর অর্থ এই সরকার দাঁড় করিয়েছে- ফর দ্য মাফিয়া, বাই দ্য মাফিয়া, অফ দ্য মাফিয়া। বাংলাদেশকে মাফিয়াদের হাত থেকে উদ্ধার করে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতেই কাজ করছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
লিখিত বক্তব্যে দলের রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক বলেন, আমেরিকার ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট নামক প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশের অবৈধ অর্থ পাচার এবং আত্মসাৎ নিয়ে কাজ করে। তারা ২০১৩, ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে আমাদের দেশের সম্ভাব্য পাচার নিয়ে তিনটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তাদের হিসাবে- ২০০৬ থেকে ২০১৫ এই ১০ বছরে প্রায় ৬২ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে তারা অনুমান করেছিল। সেই হিসাব অনুযায়ী এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৩ সাল নাগাদ প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হওয়ার কথা। দেশে একটা ‘ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ আছে। যাদের দেশের পাচার বন্ধে কাজ করার কথা। তারা ২০১৮ সালের রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির তথ্য জিএফআইকে সরবরাহ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে তাদের থেকে আমরা কোনো হিসাব পাচ্ছি না।
পাচার বন্ধে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রস্তাবনাগুলো হলো-
১. লুটপাট ও পাচার বন্ধের সকল আইনকানুন সংস্কার করতে হবে।
২. পাচার ও লুটপাটবিরোধী আন্তর্জাতিক যে সমস্ত আইন, কনভেনশন, প্রতিষ্ঠান রয়েছে- বাংলাদেশকে অবিলম্বে সেই সমস্ত আইন এবং কনভেনশন র্যাটিফিকেশন করতে হবে।
৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তারাসহ অপরাপর সকল দেশকে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত সম্পদ অনুসন্ধান, চিহ্নিত এবং বাজেয়াপ্ত করার জন্য দেশের জনগণের পক্ষ থেকে আহবান জানাচ্ছি।
৪. স্বাধীনতার পরে বিগত ৫২ বছরে পাচারকৃত অর্থ-সম্পদের হিসাব শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভুইয়া, সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, দপ্তর সমন্বয়ক নাঈমুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন