দেশের জনসংখ্যার ৪৫ ভাগের বেশি জনগোষ্ঠী ১০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। যারা কিশোর-কিশোরী এবং যুবসমাজের অন্তর্ভুক্ত। দেশের এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বড় অংশই তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ সার্ভিস ট্রেনিং অ্যান্ড এডুকেশন প্রোগ্রাম (আরএইচস্টেপ) আয়োজিত সেমিনারে তারা এসব তথ্য জানান।
বক্তারা বলেন, অজ্ঞতার কারণে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী টিনেজারদের যৌনসংক্রান্ত সমস্যার পাশাপাশি তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকালেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন নিজেদের জীবদ্দশায় বন্ধ্যাত্বে ভুগছেন। সে হিসেবে বিশ্বের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বন্ধ্যাত্বে ভুগছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ করে নারী-পুরুষের প্রজননতন্ত্রের প্রতি অবহেলা আর অযত্নই এসব বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এঅ্যান্ডআরএইচ) ডা. মো. মনজুর হোসেন। এ সময় তিনি কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়সমূহ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বর্তমান পরিস্থিতি, সমন্বিত যৌন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও বর্ণনা করেন।
ডা. মনজুর হোসেন বলেন, বাংলাদেশ প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক কোনো অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি। এর মূলে রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে অসচেতনতা, ভুল ধারণা এবং লজ্জাশীলতা। বিভিন্ন জরিপ করতে গিয়ে আমরা পেয়েছি, নারীরা প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে পুরুষদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী হন না। আমাদের পুরুষদের মধ্যেও অনেকেই নিজেদের প্রজনন অঙ্গের যত্ন নেন না। এটি ভবিষ্যতে ভয়াবহ একটি পরিস্থিতি তৈরি করবে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক চেষ্টার পর দেশে সেনেটারি প্যাডের ব্যবহার কিছুটা বাড়াতে পেরেছি। আমরা সরকারি উদ্যোগে সারা দেশেই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্যাড বিতরণ করছি। এখন আমাদের অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। চাহিদামাত্রই আমরা বিভিন্ন ধরনের সেনিটেশনসামগ্রী পাঠিয়ে দিতে পারি। তারপরও এখনো অসংখ্য মানুষ পুরোনো কাপড়ের ওপরই নির্ভরশীল। সেটিও যদি সঠিকভাবে পরিষ্কার করে ব্যবহার করা হয়, তাহলে খুব একটা সমস্যা হবে না।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত নারীবান্ধব টয়লেটের ব্যবস্থা করতে পারিনি। কিছু প্রতিষ্ঠানে আলাদা থাকলেও সেখানে প্যাড পরিবর্তনের কোনো সিস্টেম নেই। সেগুলোতে নেই কোনো প্যাড ব্যাংক, যেখান থেকে প্রয়োজনমাফিক নারী শিক্ষার্থীরা নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
ডা. মনজুর আরও বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে- প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে আমাদের ফার্টিলিটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৭ দশমিক ৬ শতাংশের মতো ফার্টিলিটি নারী-পুরুষদের নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় নারীরা অন্তত পারফিউম, প্লাস্টিক, ফাস্টফুড এগুলো যতটুকু পারেন এভয়েড করে চলবেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর আরএইচস্টেপ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন সংস্থাটির উপপরিচালক (প্রোগ্রাম) ডা. এলভিনা মুস্তারী। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের ১২টি অধিকার এবং এর উপাদানগুলোর ওপরও আলোচনা করেন ডা. এলভিনা মুস্তারী। এসময় যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
তারপর ‘অধিকার এখানে, এখনই-২’ প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত জানান আরএইচস্টেপ-এর প্রজেক্ট অফিসার তৌশিন আহমেদ সোহেল।
মন্তব্য করুন