

বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) কর্তৃক ফিলিপ মোরিস বাংলাদেশ লিমিটেডকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তামাক বিরোধী জোট বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল এডভোকেটস (বিটিসিএ)।
রোববার (০২ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এতে সই করেন সংস্থাটির আহ্বায়ক ইকবাল মাসুদ, সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম তাহিন, আমিনুল ইসলাম সুজন, সুসান্ত সিনহা, সৈয়দা অনন্যা রহমান, ফারহানা জামান লিজা, সামিউল হাসান সজীব ও আবু রায়হান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিকোটিন পাউচ মূলত গামের মতো একটি পণ্য, যা মুখে রেখে ব্যবহার করা হয়। মুখের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে নিকোটিন রক্তে প্রবেশ করে, ফলে এটি দ্রুত নেশা সৃষ্টিকারী প্রভাব ফেলে। যদিও এটি ই-সিগারেট বা ভ্যাপের বিকল্প হিসেবে বাজারজাত করা হয়, তবুও এতে উচ্চমাত্রার নিকোটিন থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বিটিসিএ জানায়, বেলজিয়াম, রাশিয়া, উজবেকিস্তান ও ফ্রান্সসহ অন্তত ৩৪টি দেশ ইতোমধ্যে নিকোটিন পাউচ উৎপাদন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ বা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। অথচ বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় এই অনুমোদন ‘একটি প্রাণঘাতী সিদ্ধান্ত’।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের সর্বোচ্চ আদালত পূর্বে নির্দেশ দিয়েছিল- যৌক্তিক সময়ে তামাক ব্যবহার হ্রাস করতে হবে এবং নতুন কোনো তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া যাবে না। বরং বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল্প, অ-তামাকজাত পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করার নির্দেশনা রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে বিইজেডএ’র এই অনুমোদন আদালতের রায়ের পরিপন্থি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের উদ্দেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মাত্র ৬৩ জনের কর্মসংস্থান এবং প্রায় ৫১ কোটি টাকার বিনিয়োগের বিনিময়ে জনগণের জীবন, স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণকে ঝুঁকির মুখে ফেলা কোনোভাবেই ন্যায্য নয়।
বিটিসিএ দাবি করেছে, নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে যারা এই অনুমোদন দিয়েছে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সংস্থাটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে নিকোটিন পাউচসহ সকল নিকোটিনজাত পণ্যকে আইনের আওতায় এনে উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। বর্তমান সরকার একটি স্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম জাতি গঠনের যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, সেই প্রয়াসে জনগণের ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন কোনো পণ্য উৎপাদন বা অনুমোদন গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির সকল পণ্য নিষিদ্ধের রাষ্ট্রকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টের আদেশ পালন করা দেশের প্রতিটি সংস্থার দায়িত্ব ও কর্তব্য। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ‘ভয়েস অব ডিসকভারি’ মামলায় দেশে যৌক্তিক সময়ে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে নির্দেশনা প্রদান করে। একই রায়ে দেশে নতুন তামাক কোম্পানিকে লাইসেন্স না দেওয়া এবং বিদ্যমান তামাক কোম্পানিগুলোকে এই ব্যবসা থেকে সরিয়ে অন্য ব্যবসায় স্থানান্তরিত করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার নির্দেশনা প্রদান করেছে।
মন্তব্য করুন