১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, পার্বত্য চুক্তি দেশের বড় অর্জন ছিল। তবে দীর্ঘেদিনেও এটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় চুক্তির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখনও পার্বত্য চট্টগ্রাম অনেক জটিল ও কঠিন হয়ে গেছে। সরকারের বাইরে এবং সরকারের মধ্যেও চুক্তিবিরোধী শক্তি রয়েছে। তারা জনসংহতি সমিতির মধ্য দিয়ে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা ভেঙে দিয়েছে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫ বছর উপলক্ষ্যে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, যদিও শেখ হাসিনার শাসনামলে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে কিন্তু এই চুক্তি হওয়ার পেছনে একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। একদিকে যেমন পাহাড়ে লড়াই-সংগ্রাম হয়েছিল অন্যদিকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সমতলেও একটা প্রচেষ্টা ছিল। চুক্তির একটি বড় দিক ছিল বেসামরিকিকরণ। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সেকানকার রাজনৈতিক অস্থিরতার দোহায় দিয়ে সেখানে এখন উল্টো সামরিকায়ন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সামরিক সমাধন নেই, রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উদ্যোগে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলগুলোকেও যুক্ত করা যায় কি না সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। কেননা দেশের বর্তমান বাস্তবতায় বাম-প্রগতিশীল দলগুলোর যে শক্তি-সামর্থ্য, সেটা এই আন্দোলনকে সফল করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়।
অনুষ্ঠানে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আদিবাসীদের মধ্যকার ঐক্য-সংহতি জোরদার করার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। ৭২ এর সংবিধানের কিছু অসম্পূর্ণতা থাকলেও সেই সংবিধানের আলোকে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। জনসংহতি সমিতি কেবল আঞ্চলিক দল হিসেবে নয়, জাতীয় পর্যায়েও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, পাহাড় এবং সমতলের বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি এস এম এ সবুর বলেন, যুদ্ধাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই শান্তিচুক্তি করা হয়েছিল। এখন চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যে নতুন করে অস্ত্র হাতে তুলে নেবে না- তার নিশ্চয়তা তো দেওয়া যায় না।
চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন এর যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকসেদুর রহমান লাভু এবং জাসদ প্রতিনিধি ও জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা প্রমুখ।
সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করে পার্বত্য সমস্যাকে স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি পেশ করা হয়। এগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচী ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে এই চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন; পাহাড়ে সামরিক কর্তৃত্ব ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের স্থায়ী অবসান করা; আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিকীকরণ ও স্থানীয় শাসন নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক যথাযথ ক্ষতায়ন; পার্বত্য ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন করে তাদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা এবং দেশের মূল স্রোতধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা।
এছাড়া সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল স্তরের স্থানীয় সরকারে বিশেষ আসন সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়।
মন্তব্য করুন