সড়কে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমাতে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। রোড সেইফটি প্রকল্পে যে বরাদ্দ রয়েছে তা পুরোপুরি সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের কাজে ব্যবহার করারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ রোববার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনের চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বাংলাদেশের সড়ক পথচারী তথা সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় প্রতিদিনই সড়ক ব্যবহারকারীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। বর্তমান আইনি বা নীতিকাঠামোতে পথচারীদের জন্য নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার বিষয়টি উদ্বেগজনকভাবে অনুপস্থিত। তাই সড়কে মৃত্যু কমাতে নতুন আইনি কাঠামো প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি।
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ অনুসরণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ তথা বহুমুখী পরিবহন ব্যবস্থা, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী এবং দুর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থাপনার আলোকে নিজেদের আইনি ও নীতি কাঠামো প্রণয়ন করে যথাযথ বাস্তবায়নে সুফল পেয়েছে।
সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের উদ্দেশ্য হলো, মানুষ বা সড়ক ব্যবহারকারী ভুল করলেও সড়ক ব্যবস্থাপনা এমন হবে যার ফলে মানুষকে তার ভুলের সর্বোচ্চ মাশুল অর্থাৎ মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের শিকার যেন হতে না হয়। এক্ষেত্রে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি যে, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় বাংলাদেশ রোড সেইফটি প্রকল্পে যে বরাদ্দ রয়েছে তা পুরোপুরি সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের কাজে ব্যবহার করা।
সড়ক দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বহুমাত্রিক হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে তা নিরসন করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও কার্যকর উদ্যোগ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এই আইনে কিছু কার্যকর দিক থাকলেও এর প্রচুর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইনে গতিসীমা লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান বর্ণিত থাকলেও গতিসীমা নির্ধারণ হয়নি।
নিসচা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সড়ক দুর্ঘটনার আচরণগত পাঁচটি মূল ঝুঁকি যেমন অতিরিক্ত গতি, স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট ও সিটবেল্ট ব্যবহার না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ আসনের অনুপস্থিতি বিবেচনায় রেখে সার্বিকভাবে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে যথাযথ আইন ও বিধিমালা বাস্তবায়িত হলে সড়ক নিরাপদ হয়ে উঠবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিসচার মহাসচিব লিটন এরশাদ, বেলায়েত হোসেন খান নান্টু, মঞ্জুলী কাজী, আব্দুর রহমান, ফিরোজ আলম মিলন, এম নাহিদ মিয়া, মো. মহসিন হোসেন খান প্রমুখ।
আগামী ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে নিসচার পক্ষ থেকে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ বছর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আইন মেনে সড়কে চলি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’।
মন্তব্য করুন