বাংলাদেশে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত চাপ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের দাবি, এ সময় সরকার রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়েছে এবং গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। এগুলো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য জানুয়ারির নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফলকে প্রভাবিত করারই প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশের ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য’ গত মাসে অনির্দিষ্টসংখ্যক বাংলাদেশিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। ব্রিটেনও বাংলাদেশে ‘অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে চাপ দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার পশ্চিমাদের এমন সমালোচনার তীব্র বিরোধিতা করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ভিসানীতি ওয়াশিংটনের ‘বিশেষ ক্ষমতা’। গত মাসে ঢাকায় ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, পশ্চিমাদের কেউ কেউ বাংলাদেশে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’ করতে চায়।
সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে ‘খুব ভালো’ সম্পর্ক রয়েছে। এমন সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের উত্তেজনা আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শেখ হাসিনা ১৭ কোটি মানুষের দেশটিকে উন্নয়নের সফল উদাহরণ হিসেবে প্রচার করতে চেয়েছেন। সেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে বড় অবদান রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। ভারত এবং চীনের সঙ্গেও বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দশকের পর দশক ধরে রক্তক্ষয়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত। এতে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটিতে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপিরও অভিযোগ উঠেছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, আমরা যেখানেই গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হতে দেখি সেখানেই আমরা ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করি। বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনভাবে নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারবে-- এমন আকাঙ্ক্ষাকে তারা সমর্থন করে। ২০২১ সালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পুলিশের এই ইউনিট গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ একনায়কতান্ত্রিক সরকারগুলোর বিকল্প হিসেবে গণতন্ত্রকে তুলে ধরে, যা চীনের প্রভাবকে সীমিত করার আঞ্চলিক কৌশলের অংশ।
কুগেলম্যান আরও বলেন, ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখাটা শেখ হাসিনার জন্য অস্তিত্বের বিষয় হতে পারে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং দলটির সিনিয়র নেতারা মামলার শিকার হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে তারা প্রতিশোধমূলক রাজনীতির উগ্র শিকার হতে পারেন বলে শঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা যদি যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকে তাহলে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি তাদের জন্য বাধা হবে না।’
মন্তব্য করুন