এডিস মশার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চলতি বছরের শুরু থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অভিযানে এডিস মশার লার্ভা পেলে ভবন মালিককে জরিমানাও করা হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত মশক নিধন অভিযানে বিভিন্ন ভবন মালিক ও প্রতিষ্ঠানকে দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ডিএনসিসি।
রোববার (৮ অক্টোবর) বাড্ডা লিংক রোড ও নতুন বাজার এলাকায় ডিএনসিসির চলমান ডেঙ্গুবিরোধী অভিযানে ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়ে এসব তথ্য জানান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। আমরা যদি এডিস মশা না পেতাম, তাহলে তো জরিমানা করতাম না। দুই মাস আগে একেকদিন কারও বাড়িতে পাঁচ লাখ, কারও অফিসে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এমনকি এক দিনে ২৫ লাখ টাকাও জরিমানা করা হয়েছে। আজকেও বিশেষ অভিযান চলছে।
এ সময় এডিস মশা নিধন করতে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে নতুন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান মেয়র আতিকুল। তিনি বলেন, অক্টোবর মাসে এখন বৃষ্টি হচ্ছে আবার রোদ হচ্ছে। এটি একটি সুন্দর আবহাওয়া এডিস মশার লার্ভা বিস্তারের জন্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উত্তর সিটি করপোরেশন একটি নতুন পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরা আমাদের আওতাধীন প্রতিটি ওয়ার্ড এখন থানায় ভাগ করে ফেলেছি। অর্থাৎ আমাদের এডিস মশা নিধন কার্যক্রম এখন থানাভিত্তিক চলবে। এতে আমরা বেশি এলাকায় যেতে পারব এবং মশা নিধন করতে পারব।
নতুন এ পরিকল্পনা সম্পর্কে মেয়র আতিকুল বলেন, আমরা প্রতিটি থানাকে প্রথমে ছয়টি জোনে ভাগ করেছি। আবার এ ছয়টি জোনের প্রতিটিকে ১০ ভাগ করে নিয়েছি। অর্থাৎ প্রতিটি থানাকে ৬০ ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাগে গতকাল শনিবার থেকে আমাদের টিম মশা নিধনের কাজ করছে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এরপর আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জরিপ করব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেও জরিপ করতে বলব। জরিপ করার পর যদি আবহাওয়াবিদরা বলেন আবার বৃষ্টি এবং রোদ হতে পারে, তাহলে আমরা আমাদের এ কার্যক্রম আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দেব।
মেয়র বলেন, আগে আমরা এ কাজটি ওয়ার্ডভিত্তিক করতাম। এখন আমরা এটাকে থানাভিত্তিক করেছি। আজকে আমরা বাড্ডা থানায় এসেছি। বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে এবং নির্মাণাধীন ভবনে গেলাম। আমরা সেখানে এডিস মশার লার্ভা পাইনি। সবাই যদি যার যার বাসা পরিষ্কার রাখে, তাহলে আমরা অবশ্যই একটি ভালো সুফল পাব।
জনগণের সহযোগিতা চেয়ে মেয়র আতিকুল বলেন, আমরা চাই না জরিমানা করতে। এডিস মশা ড্রেনে হয় না, বাসাবাড়িতে হচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে কার পার্কিং, গাড়ি ধোয়ার কাজ করা হয়, সেখানে এডিস মশা জন্মাচ্ছে। গাড়ি ধোয়ার পর সেই জায়গায় একটু ব্লিচিং পাউডার, কেরোসিন ছিটিয়ে দিলেই হয়। আমাদের অভিযান সাত দিন, সাত দিন করে চলবে। পাশাপাশি আমি সবাইকে অনুরোধ করব, পাড়া-মহল্লা, মসজিদ, প্যাগোডা, স্কুলে সব জায়গায় যেন আলোচনার বিষয়বস্তু হয় এডিস মশা। এটিকে কোনোভাবে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। একটি মৃত্যু একটি পরিবারের ধ্বংস নিয়ে আসে। তাই আমরা সবাই একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি, এডিস মশার জন্য যার যার বাসা বাড়ি পরিষ্কার রাখি।
তিনি বলেন, জনগণকে যত বেশি সম্পৃক্ত করতে পারব, ততবেশি আমরা এডিস মশা থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারব। অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু নেই এটি আমরা যেন মোটেই না ভাবি। এখনো আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমি জনসাধারণকে অনুরোধ করব, আপনারা কোথাও পানি জমা দেখলে আমাদের হটলাইনে কল করুন। এ ছাড়া আমাদের ওয়েবসাইটে গেলে এখন দেখা যাবে, কোন ওয়ার্ডে কে মশক সুপারভাইজার, কে সহকারী হেলথ অফিসার, কে ডেপুটি সহকারী হেলথ অফিসার। সবার নম্বর দেওয়া আছে। এ তথ্য আপনারা (রাজধানীবাসী) ব্যবহার করতে পারবেন।
মন্তব্য করুন