কবি আসাদ চৌধুরী চারণের মতো সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার কথা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। বাংলা কবিতার অতি আপনজন আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশে উর্দু কবিতাচর্চার ইতিহাসেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে দেশবরেণ্য লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো কবি আসাদ চৌধুরীর প্রয়াণে স্মরণসভা অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন আসাদ চৌধুরীর গৌরবজনক অবদান রয়েছে তেমনি আমৃত্যু তিনি মেহনতি মানুষের জন্য একটি সুষম সমাজ ও স্বদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে গেছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে আসাদ চৌধুরীর আত্মা শান্তি লাভ করবে।
শুরুতে প্রয়াত কবির স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্মরণসভায় আসাদ চৌধুরীকে নিয়ে তার জামাতা নাদিম ইকবাল নির্মিত একটি তথ্যচিত্র এবং তাকে নিবেদিত কবিতাচিত্র প্রদর্শিত হয়। আসাদ চৌধুরী রচিত ‘বারবারা বিডলার-কে’ কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী, বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু। প্রবাসে অবস্থানকালে ১৯৮৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্তির সংবাদকে কেন্দ্র করে রচিত আসাদ চৌধুরীর ‘পুরস্কার’ রচনার অংশবিশেষ পাঠ করেন কবি পিয়াস মজিদ।
সূচনা বক্তৃতা প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। স্মৃতিচারণ ও মূল্যায়নমূলক আলোচনা অংশ নেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. মিজানুর রহমান, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক, কথাসাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া, শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, কবি বিমল গুহ, কবি আসাদ মান্নান, গবেষক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, লেখক-প্রকাশক রবীন আহসান, লেখক হরষিত বালা, বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক ড. জালাল আহমেদ, রহিমা আখতার কল্পনা এবং নূরুন্নাহার খানম, একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. আমিনুর রহমান সুলতান এবং ড. সরকার আমিন, উপপরিচালক ড. তপন বাগচী প্রমুখ। কানাডা থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য প্রদান করেন কবি আসাদ চৌধুরীর পুত্র আসিফ চৌধুরী এবং কন্যা নুসরাত জাহান চৌধুরী শাঁওলী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
সূচনা বক্তৃতায় কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আসাদ চৌধুরী বাংলা একাডেমি পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বাংলা কবিতার অনিবার্য কবি। তিনি আমাদের ভালোবাসার মানুষ। মৃত্যুতে এই ভালোবাসা নিঃশেষ হয়নি বরং আরও প্রগাঢ় হয়েছে।
স্মৃতিচারণ ও মূল্যায়নমূলক আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিশিষ্টজন এবং তার সহকর্মীরা বলেন, আসাদ চৌধুরীর কবিতা যেমন সহজাত সৌন্দর্যে ভাস্বর তেমনি ব্যক্তি আসাদ চৌধুরী ছিলেন মাটিলগ্ন সহজ মানুষ। তিনি তার কর্তব্যে কখনও অবহেলা করেননি। সততই উদ্ভাবনশীলতায় মুখর ছিল তার কবি ও কর্মী-আত্মা।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, বাংলা একাডেমি চিরকালই আসাদ চৌধুরী এবং তার পরিবারের কাছে এক প্রিয় গন্তব্যের নাম। আমরা বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ যে অভূতপূর্ব ভালোবাসা তিনি জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুত্তর লাভ করেছেন; তার কোনো তুলনা নেই।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের সাহিত্যের এক ধ্রুবতারার নাম। তিনি কবিতা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, শিশুসাহিত্য, অনুবাদ এবং বিচিত্র ধরনের রচনার মধ্য দিয়ে পাঠকের হৃদয় জয় করেছেন এবং তার অনিন্দ্যসুন্দর ব্যক্তিত্বের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মনের মণিকোঠায় বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন।
স্মরণসভাকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আসাদ চৌধুরী রচিত গ্রন্থের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া তার স্মরণে শোকবই খোলা হয়। স্মরণসভা সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সায়েরা হাবীব।
মন্তব্য করুন