বিএনপির সমাবেশ ও হরতাল ঘিরে গত শনিবার ও রোববার ঢাকায় সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা বিদেশি কূটনীতিকদের জানিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে বিএনপি সংঘটিত সহিংসতার মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন বানচাল করা। এ ছাড়াও মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরেফীকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিএনপির কর্মকাণ্ডের কথাও কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় বিদেশি কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে সরকার বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রার নাম নিয়ে অপজিশন পার্টি বিএনপি যেসব সংঘাত-সহিংসতা করেছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই এবং তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা দরকার। গত কয়েক দিনে তারা যা করেছে, তার মূল উদ্দেশ্য আসছে নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু না হয়। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য তারা এ ধরনের অপকর্ম করেছে। আমরা সেজন্য বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের ডেকে জানিয়েছি, ২৮ তারিখে এখানে কী হয়েছে। প্রেডিসেডন্ট বাইডেনের মিথ্যা উপদেষ্টা হিসেবে একজনকে নিয়ে কী কী করা হয়েছে, সেটাও তুলে ধরেছি।
এ সময় বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করব। রাজনৈতিক সহিংসতা করে সরকার পতনের যে চেষ্টা, এটা অলিক। আপনারা নির্বাচনে আসেন। নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হয়।
ব্রিফিংয়ের সূচনা বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবর যা ঘটেছে তাতে আমরা মর্মাহত। যদিও অতীতে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকায়, আমরা অতটা বিস্মিত হইনি। দুঃখের সঙ্গে বলছি, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম তারা বদলাবে, কিন্তু তারা পাল্টায়নি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে শনিবার সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ। সেদিন রাজধানীজুড়ে বিএনপির ব্যাপক সংঘাত ও সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার। প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক আহত হন। সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই রোববার সারা দেশে হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। সেই হরতালেও দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন পোড়ানো হয়, সহিংসতায় প্রাণ যায় অন্তত একজনের। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও অগ্নিসন্ত্রাস করেছে।
এবারও বিএনপির সংঘাত-সহিংসতা জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, তারা পাল্টাবে- কিন্তু তারা পাল্টায়নি। তারা অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি।
এ সময় আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে ব্যাপারে আমরা কূটনীতিকদের পুনর্ব্যক্ত করেছি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কূটনীতিকদের কোনো প্রশ্ন আছে কি না জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে তারা ব্রিফিংয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ২৮ তারিখে যেসব ঘটনা ঘটেছে, ওইদিন তাৎক্ষণিক যেসব ফুটেজ পাওয়া গেছে; সেগুলো বিদেশি মিশনগুলোতে পাঠিয়েছি। আজকে আবার তাদের সহিংসতার ভিডিও ফুটেজ ছবিসহ তাদের নানা ডকুমেন্ট দেখানো হয়েছে।
বিদেশি কূটনীতিকদের বক্তব্য কি ছিল- জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, তাদের অভিব্যক্তি দেখে বোঝা গেছে, তারা এসব দেখে খুব অবাক হয়েছেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে বর্তমানে যে প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটা মেনেই অংশগ্রহণ করতে হবে।
ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মান, ইতালি, ফ্রান্স, জাপান, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, স্পেন, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, ইইউ, জাতিসংঘ, ওআইসি, বিমসটেকসহ ঢাকার প্রায় সব বিদেশি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও প্রতিনিধিরা অংশ নেয়।
মন্তব্য করুন