রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন তরুণ আর্জেন্টাইন তারকা ফ্রাঙ্কো মাস্তান্তুয়োনো। তবে সেটা মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে বরং নামকে ঘিরে স্পেনে শুরু হওয়া এক অদ্ভুত বিতর্কে—যেখানে তাকে কি বলা হবে ফ্রাঙ্কো, নাকি মাস্তান্তুয়োনো এই নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা?
বিতর্কের সূত্রপাত স্পেনের জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ‘এল চিরিংগিতোতে’। সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে সমর্থকদের মাঝে। কারণটা ঐতিহাসিক—‘ফ্রাঙ্কো’ নামটি স্পেনে জড়িয়ে আছে এক কালো অধ্যায়ের সঙ্গে। স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো টানা ৩৬ বছর স্পেন শাসন করেছেন ভয়, হত্যা আর নিপীড়নের মাধ্যমে। আর রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তার নামও বহুদিন ধরে যুক্ত হয়ে আছে নানা অভিযোগে।
এদিকে আর্জেন্টিনায় খেলোয়াড়দের সাধারণত ডাকনাম বা শেষ নামেই সমর্থকরা চেনে। তাই দেশটির সাংবাদিক জর্জ দ’আলেসান্দ্রো ও মাতিয়াস পালাসিওস পরিষ্কার মত দিয়েছেন ‘ওকে মাস্তান্তুয়োনো বলাই স্বাভাবিক।’ কিন্তু স্পেনে ফুটবলারদের প্রথম নামে ডাকার প্রবণতা বেশি, যেমন জাভি হার্নান্দেজ বা বর্তমান রিয়াল কোচ জাবি আলোনসো। এই সাংস্কৃতিক পার্থক্যই যেন আরও তেল ঢেলেছে বিতর্কে।
‘ফ্রাঙ্কো’ নামের ছায়া
ফুটবলে অবশ্য নাম নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। ফ্রাঙ্কোর আমলে রেফারি অ্যাঞ্জেল ফ্রাঙ্কো ম্যাচ পরিচালনা করতেন। তখন সমর্থকরা চিৎকার করতেন—“ফ্রাঙ্কো খারাপ” বা “ফ্রাঙ্কো ম্যাচ নষ্ট করল।” এতে যেন শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী স্লোগান তৈরি হতো। সেই ভুল বোঝাবুঝি এড়াতেই তখন স্পেনে রেফারিদের দ্বৈত পদবী ব্যবহার শুরু হয়।
‘রেজিমের দল’ তকমা
এ ছাড়াও স্পেনে অনেকেই এখনো বিশ্বাস করেন, ফ্রাঙ্কো রিয়াল মাদ্রিদকে রাজনৈতিক প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। ষাটের দশকে রিয়াল টানা ছয়টি ইউরোপিয়ান কাপ জেতে, আর মাদ্রিদকে বলা হতে থাকে “রেজিমের দল।” যদিও ইতিহাস বলছে, সে সময় বার্সেলোনাও কম সুবিধা পায়নি—ক্যাম্প ন্যু উদ্বোধনে ফ্রাঙ্কোর মন্ত্রী ছিলেন অতিথি, ক্লাবটি ফ্রাঙ্কোকে সোনার ব্যাজ উপহার দিয়েছিল এবং তিনবার আর্থিকভাবে দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিল।
ফলে মাস্তান্তুয়োনোর প্রথম নাম যেন পুরনো ক্ষত আবার উস্কে দিয়েছে। মাঠে তিনি রিয়ালের হয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিলেও, গ্যালারিতে এখন প্রশ্ন—“ফ্রাঙ্কো, না মাস্তান্তুয়োনো?”
অবশ্য ১৮ বছরের তরুণ এই আর্জেন্টাইন হয়তো নামের চেয়ে খেলাতেই বেশি মনোযোগ দেবেন। আর সমর্থকরাও হয়তো ধীরে ধীরে বুঝবেন—কোনো নাম নয়, মাঠের পারফরম্যান্সই ইতিহাসে জায়গা করে দেয়।
মন্তব্য করুন