রাতে একটু দেরি করে ঘুমালেন, সকালে একটু দেরি করে উঠলেন—ভাবছেন, ক্ষতি কী? ঘুম তো হয়েছেই! কিন্তু জানেন কি, এই ঘুমের সময়ের ছোটখাটো অনিয়মও নীরবে বাড়িয়ে দিচ্ছে আপনার স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি?
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, শুধু ঘুমের পরিমাণ নয়—প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া আর ঘুম থেকে ওঠাও শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়গুলো এলোমেলো হলেই আপনার শরীরের ভেতরের ছন্দ ভেঙে যায়, যা সরাসরি প্রভাব ফেলে হৃদয়ের ওপর।
আরও পড়ুন : ঘুম না আসার পেছনে আপনার ৫ ভুল
এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে Journal of Epidemiology & Community Health-এ। গবেষণায় বলা হয়েছে, যাদের ঘুমের সময় এলোমেলো, তাদের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা হার্ট ফেল করার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন কানাডার একজন বিশেষজ্ঞ, জ্যাঁ-ফিলিপ শাপুট। তিনি বলেন, প্রতিদিন ঘুম ও জাগরণের সময় যদি বদলায়, তাহলে শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ বা বডি ক্লক বিঘ্নিত হয়। এতে শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন হরমোন নিঃসরণ, বিপাকক্রিয়া, রক্তচাপ ঠিকভাবে কাজ করে না—যার প্রভাব পড়ে আমাদের হৃদয়ের ওপর।
৭২ হাজারেরও বেশি মানুষকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের বয়স ছিল ৪০ থেকে ৭৯ বছর। তাদের ঘুমের নিয়ম অনুযায়ী তিনটি দলে ভাগ করা হয়:
নিয়মিত ঘুম: যাদের ঘুমের সময় খুবই নিয়মমাফিক (SRI ৮৭.৩ বা তার বেশি)
মাঝারি অনিয়ম: ঘুমের নিয়ম কিছুটা এলোমেলো (SRI ৭১.৬–৮৭.৩)
অত্যন্ত অনিয়মিত: যাদের ঘুম একেবারেই এলোমেলো (SRI ৭১.৬-এর নিচে)
- যাদের ঘুম সবচেয়ে অনিয়মিত ছিল, তাদের স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়েছে ২৬%।
- মাঝারি অনিয়মে এই ঝুঁকি বেড়েছে ৮%।
আরও পড়ুন : এই কৌশলে মাত্র ২ মিনিটেই ঘুমিয়ে পড়বেন যেভাবে
- আর যারা নিয়ম করে ঘুমান, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ১৮% কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের সময় ঠিক না থাকলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম বিঘ্নিত হয়। এতে শরীরের ভেতরে চলা নানা প্রক্রিয়া যেমন বিপাক, হরমোন নিঃসরণ বা রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণ—সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে হৃদরোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
গবেষকরা কিছু সহজ টিপস দিয়েছেন:
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন
- ঘুমানোর আগে ভারী খাবার ও ক্যাফেইন খাবেন না
- মোবাইল বা স্ক্রিন কম ব্যবহার করুন
- ঘুমানোর আগে শান্ত পরিবেশে থাকুন এবং একটি নির্দিষ্ট রুটিন মানুন
আরও পড়ুন : ঘুমের মধ্যে ঘামছেন, ক্যানসারের লক্ষণ নয়তো
স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের ঘুম বিশেষজ্ঞ স্কট কুচার বলেন, ঘুম ঠিক করার সবচেয়ে বড় কৌশল হলো—প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা। সেটি ঠিক করতে পারলে অন্য সমস্যাও সহজে ঠিক হয়ে যাবে।
শুধু ক্লান্তিই নয়, ঘুমের অনিয়ম আপনার অজান্তেই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তাই সুস্থ থাকতে হলে এখনই ঘুমের রুটিন ঠিক করুন।
সূত্র: হেলথলাইন
মন্তব্য করুন