বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার লিপি বলেছেন, নারীরা এখনও কৃষকের মর্যাদা পায়নি। যার ফলে তারা ঋণ পাচ্ছে না। কিন্তু সমবায়ের মাধ্যমে তা পেতে পারে। সমবায় আইন সংশোধন করে এমন করা হোক যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সক্ষমতা অর্জন করে রাষ্ট্রের ক্ষমতার অংশীদার হতে পারে।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেটে দৈনিক কালবেলার প্রধান কার্যালয়ের সেমিনার কক্ষে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমবায় গঠনে অন্তরায় ও উত্তরণ: প্রসঙ্গ সমবায় সমিতি আইন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও দৈনিক কালবেলা গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে।
আইনজীবী আইনুন নাহার লিপি বলেন, ছোটবেলায় বিজ্ঞাপন দেখেছি, স্বনির্ভর হতে গেলে সমবায় নীতি করতে হবে। আমি যদি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে চাই তবে রাষ্ট্রকে একটু বেশি এফোর্ট দিয়ে তাদের নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আইনটা পড়লে মনে হবে যে, যারা সমবায় করবে তাদের ওপর মাতব্বরি করার জন্য আইনটা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার এলাকা হচ্ছে হাওর এলাকা। সেখানে কিছু মৎস্যজীবীদের মামলা-মোকদ্দমা। যেহেতু আমার এলাকা তাই আমি চিনি কারা বড়লোক মৎস্যজীবী। আমার কাছে এসে বলে, জলমহালটা আমরা পেয়েছি কিন্তু এখনও বুঝে পাইনি বা জলমহালটা আমরা নিয়েছি এখনও টাকা উঠেনি। এখন এখানে যেন নতুন কিছু না হয় সে ব্যাপারে কিছু করে দাও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওই জলমহালটা যে সমিতি নিয়েছে সেই সমিতির হর্তাকর্তারা বিশাল বড় লোক। তারা হয়তো জীবনে বড়শি দিয়ে একটি মাছ ধরেনি। আর যারা আসল মৎস্যজীবী তারা তাদের কর্মচারী-শ্রমিক। এসব লোক নিজেদের নাম লিখতে জানে না। তাদের কাজ জানে না। তারা শুধু একটি সমিতিতে আছে কিন্তু তাদের কী চাহিদা তা বলতে পারে না।
তিনি বলেন, এগুলো যেমন আছে তেমন কৃষিক্ষেতে নারীদের অবস্থান। পুরুষরা কৃষিকাজ শুরু করলেও একটা সময় পর সব কাজ নারীরা করেন। যেমন ধান সিদ্ধ করা, মাড়াই করা, ঢেঁকিতে পাড় দেওয়া, চাল করা পুরোটাই নারীদের করতে হয়। কিন্তু তবু তারা কৃষকের মর্যাদা পাচ্ছে না। এ জন্য তারা ঋণ পাচ্ছে না। সমবায়ের আইনটাই বানানো হয়েছে যত জটিল করা যায়। পদ্ধতিটা যত জটিল হবে যাতে তোমরা সমবায়টি না করতে পারো।
আইনজীবী আইনুন নাহার লিপি বলেন, আইনটা পড়লে সমবায়ের মানে আর খুঁজে পাচ্ছি না। অনেক আইন বাতিল করা হয়েছে। প্রয়োজনে এটিও বাতিল করে নতুন করে করা হোক। পুরো আইনটাই রিভিউয়ের দাবি রাখে। এটি সংশোধন করে এমন করা হোক যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সক্ষমতা অর্জন করুক, রাষ্ট্রের ক্ষমতার মধ্যে অংশীদার হোক।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে ও কালবেলা মাল্টিমিডিয়ার শিফট ইনচার্জ অমিত হাসান রবিনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক (সমিতি ব্যবস্থাপনা) আহসান কবীর। আলোচক ছিলেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার লিপি ও রাজশাহীর রুলফাওর পরিচালক আফজাল হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন