ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মশকবিরোধী অভিযানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা, টিসিবি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি) এবং যমুনা অয়েলকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার (১০ জুলাই) দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কারওয়ানবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করা হয়।
অভিযানের শুরুতে জাহাঙ্গীর টাওয়ারে মশার লার্ভা পেলে ভবন কর্তৃপক্ষ অফিস রুম তালা দিয়ে অন্য কোথাও চলে যায়। পরে মেয়র সেই তালার ওপর নতুন করে আরেকটি তালা লাগিয়ে দেন। এরপর পেট্রোবাংলা ভবনের বেজেমেন্টের ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের দেয়াল ঘেঁষে একটি ছোট পানির নালায় প্রচুর পরিমাণে এডিস মশার লার্ভা দেখা যায়। এই পরিস্থিতি দেখে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ।
পরে অভিযান চলে পাশের যমুনা অয়েলের নির্মাণাধীন ভবনে। সেখানে লিফটের জন্য নির্ধারিত খালি জায়গায় পানি জমে ছিল, তাতে পাওয়া যায় মশা লার্ভা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি) ভবনেও জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা পাওয়া যায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ ওই তিন প্রতিষ্ঠানকেও ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন।
অভিযানের এক ফাঁকে মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ডেঙ্গু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, ঢাকায়ও ব্যাপকতা বেড়েছে। এ অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া দুঃখজনক। পেট্রোবাংলার যেখানে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়, সেখানে নালার মধ্যে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এখানে রীতিমতো এডিস মশার লার্ভার চাষ হচ্ছে। পেট্রোবাংলাতে যে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে তা হয়ত লাগত না, যদি তারা মাত্র ৫০০ টাকা খরচ করত। তাদের দায়িত্ব ছিল এখানে ওষুধ ছিটিয়ে দেওয়া, একটু ব্লিচিং পাউডার, একটু কেরোসিন ব্যবহার করা।
মেয়র আরও বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমরা যার যার আশপাশের আঙিনা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি, যদি পানি জমা হতে না দিই, তাহলে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না। আমি মনে করি দায়িত্বটা সবাইকে নিতে হবে। দায়িত্ব কিন্তু একা সিটি করপোরেশনের না।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পানি জমে থাকার বিষয়টি চিহ্নিত করে আমি প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তা পরিষ্কার করা এবং পানি যাতে জমে থাকতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এ জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বও দেওয়া হয়। কাজ চলাকালে যদি মশার লার্ভা পাওয়া যায়, তাহলে তার দায়িত্ব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে, পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট শাখার লোকজনকে নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাসব্যাপী অভিযানের তৃতীয় দিনে ডিএনসিসির দশটি অঞ্চলের সবগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেছেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। গেল দুই দিনের অভিযানে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ৩৩ মামলায় ২১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ ছাড়া চারটি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন।
মশক নিধন অভিযান এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেন ডিএনসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ আমিরুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোতাকাব্বির আহমেদ, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ ডিএনসিসির অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন