নাটক-চলচ্চিত্র, ওয়েবসিরিজে জনপ্রিয় শিল্পীদের হাতে সিগারেট ও ধূমপানের দৃশ্য কিশোর-তরুণদের ধূমপানে প্ররোচিত করছে। যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘণের সঙ্গে সঙ্গে তরুণদের বিপথগামী পরিস্থিতি ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে নাগরিকদের সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা নিশ্চিতে আজকের কিশোর-তরুণদের ধূমপানসহ সব ক্ষতিকর নেশা থেকে বিরত রাখা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের সামনে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) ও প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের আয়োজনে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত লিফলেট ক্যাম্পেইন এবং অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। এতে প্রায় অর্ধশত শিশু-কিশোর ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন মাননের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী, প্রত্যাশার সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, ডাস-এর টিম লিড আমিনুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।
ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, সিগারেট কোম্পানিগুলোর কৌশলী বিজ্ঞাপন, প্রচারণা এবং অপতৎপরতার কারণে কিশোর-তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। ধূমপানের দৃশ্য না থাকলে চলচ্চিত্র ব্যবসা সফল হবে না, এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে নির্মাতা, শিল্পী-কলাকুশলী, প্রযোজক, পরিচালক সকলকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নির্মাতা, শিল্পী ও কলা-কূশলীদের চলচ্চিত্র নির্মাণে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
হেলাল আহমেদ বলেন, ধূমপান ও মাদকের ছোবলে কিশোর-তরুণদের বিপথগামীতা বর্তমান সময়ের বড় উদ্বেগ। কিশোর গ্যাঙ এবং সামাজিক অপরাধে তরুণদের সম্পৃক্ততা শুভ ইঙ্গিত নয়। প্রধানমন্ত্রী তরুণদের সুরক্ষায় ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। সেটার কার্যকর বাস্তবায়ন করা হোক।
বক্তারা আরও বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে তামাকের কারণে। পরোক্ষ ধূমপানে মারা যায় ১৩ লক্ষাধিক মানুষ, যা সড়ক দুর্ঘটনা, এইচআইভি এইডস, সন্ত্রাসসহ আরও বিভিন্ন কারণে পৃথিবীতে সম্মিলিত মৃত্যুর মোট যোগফলের চাইতে বেশি। বাংলাদেশে বিগত ৪ বছরে করোনায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন। অথচ, তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। বাড়িতে, পাবলিক প্লেস-পরিবহন, কর্মস্থলে আক্রান্ত হয় প্রায় ৮ কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশে উঠতি বয়সী (১৩-১৫ বছর বয়সী) ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তামাক ব্যবহার করে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। এদের উল্লেখযোগ্য অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এ সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। করোনার চাইতে বড়, নীরব মহামারি হলো ‘তামাক’। কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত তামাকের ছোবল থেকে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি কোনো কিছুরই রক্ষা নেই। এজন্য নাটক, চলচ্চিত্র এবং নতুন মিডিয়ায় প্রচারিত কন্টেন্টগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং এ সংক্রান্ত একটি গাইডলাইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয় কর্মসূচি থেকে।
কর্মসূচিতে ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, নাটাব এবং প্রত্যাশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন